Friday, December 21, 2012

 নানা রকম সমুদ্র সৈকত

 বৈচিত্র্যময় পৃথিবীতে রয়েছে প্রকৃতির বিচিত্রতা। প্রাকৃতিক বিচিত্র খেয়ালের এমনই একটি সমুদ্র সৈকত। এসবেরও আবার রয়েছে কিছু অদ্ভুত অনুষঙ্গ। সমুদ্র সৈকতের এমন অদ্ভুত প্রকৃতি নিয়ে লিখেছেন মোস্তাক চৌধুরী
লাল সৈকত
চীনের পানজিন শহর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে লাইয়াহু নদীতে এই লাল সৈকতের অবস্থান। একধরনের সামুদ্রিক আগাছা যা লোনা এবং ক্ষারকীয় মাটিতে জšে§ এবং দেখতে লাল আর এ জন্যই এই সৈকতকে লাল সৈকত বলা হয়ে থাকে। এপ্রিল-মে মাসে এই আগাছা জন্মাতে শুরু করে এবং গ্রীষ্মে তা সবুজ বর্ণ ধারণ করে। আর শরতে এই আগাছা টক টকে লাল বর্ণ ধারণ করে যা সৈকতকে লাল গালিচায় পরিণত করে। এই লাল সৈকতের সব জায়গায় জনগণের প্রবেশাধিকার নেই শুধু নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় জনসাধারণ প্রবেশ করতে পারে।
কাচের সৈকত
ক্যালিফোর্নিয়ার ফোর্ট বার্গ শহরের কাছে একটি আকর্ষণীয় সমুদ্র সৈকত যা রঙিন কাচ দিয়ে খচিত। এই শতাব্দীর প্রথম দিকে এখানে একটি শহরের ধ্বংসস্তূপ ডাম্প করা হয়েছিল, তারপর ১৯৬৭ সালে কর্তৃপক্ষ সর্বসাধারণের এখানে প্রবেশাধিকার এবং পরিচ্ছন্ন করার কাজ বন্ধ করে দেয়। তারপর থেকে প্রাকৃতিকভাবে সমুদ্রই এখানকার পরিচ্ছন্নতার কাজ শুরু করে। এখন এখানে নেই কোনো ধ্বংসাবশেষ আছে তীরজুড়ে স্বচ্ছ ঢেউ যা একধরনের চমৎকার স্বচ্ছ পাথর দ্বারা আবৃত।
কৃত্রিম সৈকত
সারা পৃথিবীতে দিনকে দিন কৃত্রিম সৈকতের জনপ্রিয়তা বেড়েই চলেছে। মোনাকো, হংকং, প্যারিস, বার্লিন, রটারড্যাম, টরেন্টোসহ পৃথিবীর অন্যান্য জায়গায় এই কৃত্রিম সৈকত দেখা যায় তবে জাপানের মিয়াজাকির সিয়াগাইয়া ওশান ডোম পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বড় কৃত্রিম সৈকত। শেরাটন সিয়াগাইয়া রিসোর্টের একটি অংশ এই ওশান ডোম যা ৩০০ মিটার লম্বা এবং ১০০ মিটার প্রস্থ। যাতে আছে কৃত্রিম অগ্ন্যুৎপাতসহ আগ্নেয়গিরি, কৃত্রিম বালি, কৃত্রিম পাম গাছ এবং আরো আছে বিশ্বের বৃহত্তম সঙ্কোচনীয় ছাদ, যা একটি স্থায়ীভাবে নীল আকাশ প্রদান করে থাকে এমনকি বাদলা দিনেও। এখানকার বাতাসের তাপমাত্রা সব সময় ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং পানির তাপমাত্রা ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।  কৃত্রিম আগ্নেয়গিরি ১৫ মিনিট পর সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং প্রতিঘণ্টায় আগ্নেয়গিরি মুখ থেকে আগুনের হল্কা বের হয় এবং একধরনের তরঙ্গের সৃষ্টি করে যা সৈকতে এক অভাবনীয় দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। ১৯৯৩ সালে এই সৈকতটি সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয় এবং একসঙ্গে ১০ হাজার পর্যটক এখানে বেড়াতে পারে। 

নস্ট্রাডামাসের ভবিষ্যদ্বাণী

বহুকাল আগে নস্ট্রাডামাস ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন ২০১২ সালে এক প্রলয়ঙ্করী প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মাধ্যমে পৃথিবীর অস্তিত্বের অবসান ঘটবে। কেউ কেউ এ সতর্কবাণীকে নিয়েছেন অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে, কেউ আবার এটিকে আমলেই নেননি। নস্ট্রাডামাসের এমন আশঙ্কা মিথ্যা প্রমাণ করে দিয়ে এ পৃথিবী যদি ২০১২ সালে ধ্বংস হয়ে যাওয়ার হাত থেকে বেঁচেও যায়, তবু একেবারে নিশ্চিন্ত মনে বসে থাকার কোনো উপায় নেই। কেননা এবার আর অলৌকিক ক্ষমতায় অনিশ্চিত কোনো ভবিষ্যদ্বাণী নয়, একেবারে অঙ্ক কষে খোদ বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, ২০১৩ সালে পৃথিবী সম্মুখীন হবে প্রকৃতির এক ভয়ংকর রোষের। বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছেন, ২০১৩ সালে সৌরজগতের প্রাণ সূর্য এর নিজস্ব চক্রাবর্তের একটি বিশেষ মুহূর্তে প্রবেশ করবে। এ সময় সূর্যবক্ষে সঞ্চিত শক্তির বিশাল বিস্ফোরণ ঘটবে। এ বিস্ফোরণের আকার এতই ব্যাপক হবে যে, এটি গোটা সৌরজগৎ ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করবে। ওই বিস্ফোরণ থেকে নিঃসৃত চৌম্বকশক্তি পৃথিবীর যাবতীয় যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিপর্যয় ঘটাবে। এতে তাপ ও বিদ্যুৎসহ পৃথিবীর যাবতীয় শক্তি বিতরণ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যাবে। সব ধরনের টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে, ইন্টারনেট ব্যবস্থা সম্পূর্ণ অচল হয়ে যাবে। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, নিজের চক্রাবর্তে সূর্যের এ ধরনের অবস্থান সাধারণত প্রতি একশ’ বছরে একবার করে হয়ে থাকে। এর আগে অবশ্য ১৮৫৯ ও ১৯৮৯ সালেও এ ধরনের ঘটনা ছোট পরিসরে ঘটে গেছে। তবে এবার ক্ষতির ব্যাপকতা হবে অনেক বেশি। বর্তমান বিশ্ব আগের চেয়ে অনেক বেশি প্রযুক্তি ও যন্ত্রনির্ভর হয়ে ওঠায় এর প্রভাবও হবে অচিন্তনীয়। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা থেকে ব্রিটেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী লিয়াম ফক্স ভবিষ্যৎ করণীয় নিয়ে আলোচনার জন্যে গত সোমবার লন্ডনে এক জরুরি বৈঠক ডাকেন। বৈঠকে তিনি বিশ্ববাসীর মনোযোগ ও সহযোগিতা বাড়ানোর ওপর জোর দেন।

Tuesday, October 23, 2012

পাহাড় প্রান্তের অবাক শহর

পাহাড় প্রান্তের অবাক শহর



বোনিফ্যাসিও

  ফ্রান্সের কর্স-ডু-সাড বিভাগের অন্তর্গত কর্সিকা দ্বীপের দক্ষিণ প্রান্তে বোনিফ্যাসিও শহর তথা সম্প্রদায়ের অবস্থান। কর্সিকা দ্বীপের সবচেয়ে বড় সম্প্রদায় হলো বোনিফ্যাসিও। এখানকার বাসিন্দাদের বলা হয় বোনওফ্যাসিয়ান্স। মহিলাদের বলা হয় বোনিফ্যাসিনিজ। পাহাড়ের প্রান্তে থাকা হলদেটে সাদা রংয়ের চুন সুরকির দালান ঘেরা শহরটি এক সময় দুর্ভেদ্য দুর্গ হিসেবে পরিচিত ছিল।


 রন্ডা
  স্পেনের মালাগা প্রদেশের ১০০ কিলোমিটার উত্তর পশ্চিমে রন্ডা শহরের অবস্থান। শহরটি অ্যান্ডালুসিয়া সমপ্রদায় কর্তৃক পরিচালিত। রন্ডা শহর দু'ভাগে বিভক্ত। নুভো সেতু দু'টি অংশকে যুক্ত করেছে। ঐতিহাসিক স্থান হিসেবে পর্যটকদের কাছে শহরটি বেশ আকর্ষণীয়।






ডি লা রোকা

  স্পেনের গিরোনা প্রদেশের গ্যারোটজা জেলার অন্তর্গত শহর হলো ক্যাসেলফলিট ডি লা রোকা পৌর শহর। ফ্লুভিয়া ও টরোনেল নদীর মাঝামাঝি কৃষ্ণধূসর আগ্নেয়শিলার এক দুরারোহ পর্বতগাত্রের বুকে শহরটি অবস্থিত। এখানে ক্যাটলোনিয়া সম্প্রদায়ের অবস্থান। পৌরশহরটির জায়গার পরিমাণ এক বর্গকিলোমিটারের কম।



রোকা মাড্যুর

* ফ্রান্সের দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থিত লট বিভাগ ও প্রান্তন কোয়ের্কি প্রদেশের অন্তর্গত অন্যতম নিম্ননির্বাহী বিভাগ হলো রোকামাড্যুর। ডোরডোঙ্গে নদীর উপর অবস্থিত শহরটি ঐতিহাসিক স্মৃতিস্তম্ভ এবং খ্রিস্ট ধর্মের কুমারী মেরি'র ধর্মস্থান হিসেবে বিখ্যাত। তাই রোকামাড্যুর শতাব্দীর পর শতাব্দী রাজা, বিশপ ও বিখ্যাত ব্যক্তিসহ বিভিন্ন দেশের পর্যটকদের পদচারণায় মুখর থাকে।



মিটিয়োরা


  মিটিয়োরা একটি গ্রিক শব্দ। এর অর্থ হলো ঝুলন্ত পাহাড়। গ্রিসে অবস্থিত পাহাড়ের ওপর নির্মিত গির্জাটি গ্রিসের ক্যাথলিক খ্রিস্টান যাজকদের অন্যতম বৃহত্তম ও গুরুত্বপূর্ণ মঠ। মধ্য গ্রিসের থেসালি ভৌগলিক অঞ্চলের উত্তরপশ্চিমপ্রান্তে পিনিয়স নদী ও পিন্ডাস পাহাড়ের মাঝামাঝি ক্যাথলিক খ্রিস্টান যাজকদের প্রাকৃতিক বেলে পাথর দিয়ে নির্মিত পিলারের ছয়টি মঠ রয়েছে। এরমধ্যে পাঁচটি পুরুষ যাজকদের ও একটি মহিলা যাজকদের মঠ। 

Tuesday, October 9, 2012

মুসলমানরাই বাংলাদেশের আদিবাসী -মাহমুদ ইউসুফ

মুসলমানরাই বাংলাদেশের আদিবাসী 
-মাহমুদ ইউসুফ

প্রখ্যাত ভাষাতাত্ত্বিক, শিক্ষাবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রফেসর (অবসরপ্রাপ্ত) ডঃ কাজী দীন মুহাম্মদ বলেছেন, ‘আজ সাড়ে সাত হাজার বছর আগে হযরত নুহু (আঃ) এর সময়ে সংঘটিত মহাপ্লাবনের পর আল্লাহর অস্তিত্ব ও একত্ববাদে বিশ্বাসী তাঁর প্রপৌত্র বঙ এ অঞ্চলে বসতি স্থাপন করেন। এরপর যে জনগোষ্ঠি গড়ে ওঠে তা-ই বঙ্গ জনগোষ্ঠি নামে অভিহিত হয়। কালের বিবর্তনে উক্ত বঙ থেকেই বঙ্গ দেশের নামকরণ হয়েছে' (বাংলাদেশের উৎপত্তি ও বিকাশ ১ম খন্ড, ইফাবা, ২য় সংস্করণ, জুন-২০০৮, পৃ-১৬৭)। মানবজাতির আদি পিতা হযরত আদম (আঃ)। তিনিই এ পৃথিবীতে মানব সভ্যতার জয়যাত্রা শুরু করেন। ইসলাম, ইহুদী ও খৃস্টান ধর্মমতে এটাই চরম সত্য। কুরআন, বাইবেল, তাওরাতে এ সত্যেরই প্রতিধ্বনি উচ্চারিত হয়েছে।
পৃথিবীর প্রথম মানব হযরত আদম (আঃ)কে আল্লাহ রাববুল আলামীন এ ভারতবর্ষেই প্রেরণ করেন। তদানীন্তন সরন্দীপ (আজকের শ্রীলঙ্কা) আর হিন্দুস্তান একই ভূখন্ডের অন্তর্ভুক্ত ছিল। হযরত আদম (আঃ) এর পুত্র দ্বিতীয় নবী হযরত শীষ (আঃ)ও এই ভারতবর্ষেরই নাগরিক ছিলেন। এখানেই তিনি বসতি স্থাপন করেন। আর এখানেই মৃত্যুবরণ করেন। পরবর্তীতে হযরত নুহু (আঃ) এর উত্তরপুরুষেরা ভারতবর্ষ আবাদ করেন। তাই দেখা যায়, মুসলিমদের কাছে শুধু আরবভূমিই নয় এই ভারতীয় উপমহাদেশও অতি আপনভূমি। কেননা মানব সভ্যতার শুরু থেকেই মুসলমানরা এই ভূখন্ডে বসবাস করে আসছে। নেগ্রিটো, অস্ট্রল্যান্ড, অস্ট্রো এশিয়াটিক, মঙ্গোলয়েড, অস্ট্রিক, দ্রাবিড়, বৌদ্ধ, আর্য জাতির বিকাশ আরও পরের ঘটনা।পার্বত্য উপজাতির আগমন তো সেদিনের ঘটনা। সর্বোচ্চ তিনশ বছর।
খৃস্টপূর্ব সাড়ে পাঁচ হাজার বছর পূর্বে একমহাপ্লাবন সংঘটিত হয়! অনেকের মতে খৃস্টপূর্ব ৩২০০ অব্দে এটি সৃষ্টি হয়েছিল। এ মহাপ্লাবন মিসর থেকে হিন্দুস্তান, ককেশাস থেকে আরব সাগর পর্যন্ত ছড়িয়েছিল। এটি ছিল মূলতঃ আল্লাহর গজব। হযরত নুহু (আঃ) দীর্ঘ সাড়ে নয়শ বছর ইসলাম প্রচার করেন। কিন্তু গুটিকয়েকজন নাগরিক ছাড়া আর কোনো নাগরিক আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাস স্থাপন করেন নাই। এই অমুসলিম তথা মুশরিক কাফিরদের শাস্তি দেয়ার লক্ষ্যেই মহান রব গজব নাজিল করেন। এ মহাপ্লাবনে মাত্র ৮৫ জন মানুষ, যারা নূহ (আঃ) এর কিস্তিতে আরোহণ করেছিলেন তারাই জীবিত থাকে। বাকি সমগ্র মানবজাতি ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। পানিবন্যা পরবর্তী সময়ে হযরত নুহ (আঃ) এর সন্তানেরা বিভিন্ন দেশে বসতি স্থাপন করেন। তাঁর দৌহিত্র হিন্দ ভারতবর্ষ আবাদ করেন। বঙের বংশধরদের আবাসস্থলই আজকের বাংলাদেশ। বং থেকে কালক্রমে বঙ্গ, বাঙালাহ, বেঙ্গল, বাংলা ইত্যাদি নামের উদ্ভব ঘটে।
বঙ্গ নামের উৎপত্তির সঙ্গে অনেক লেখক, গবেষক ও ঐতিহাসিক ভিন্নমত পোষণ করেন। তাদের মতে, বঙ্গ শব্দের উৎপত্তি ভারতীয় আর্যদের আমলে, যারা খৃস্টপূর্ব দেড় হাজার বছর পূর্বে মধ্য এশিয়া থেকে এসে সিন্ধু নদীর তীরে দ্রাবিড়দের উৎখাত করে বসতি স্থাপন করে। প্রমাণস্বরূপ তারা উল্লেখ করেছেন, ঋগবেদের ঐতরেয় আরণ্যক এ বঙ্গ শব্দের উল্লেখ পাওয়া যায়। মহাভারত, পুরাণ, হরিবংশ প্রভৃতি গ্রন্থে বর্ণিত আছে, ‘আর্য রমণীগণ কর্তৃক পরিত্যক্ত, দুশ্চরিত্র অন্ধ ঋষি দীর্ঘতমা গঙ্গার জলে ভেসে আসাকালীন নিঃসন্তান ‘‘অনার্য' বলিরাজ তাঁকে তুলে নিয়ে যান এবং স্বীয় পত্নী সুদেষ্ণার গর্ভে পুত্র উৎপাদনের জন্য তাঁকে নিয়োগ করেন। সুদেষ্ণার গর্ভে উক্ত ঋষির ঔরসে পাঁচটি পুত্র সন্তান জন্মলাভ করে। এই ক্ষেত্রজ পুত্র সন্তানদের নাম রাখা হয় ১) অঙ্গ, ২) বঙ্গ, ৩) কলিঙ্গ ৪) পুন্ড্রু এবং ৫) সূক্ষ্ম। তাদেরকে পাঁচটি রাজ্য দেয়া হয় এবং তাদের নামানুসারে পাঁচটি রাজ্যের নামকরণ করা হয়'। যারা এই তথ্যকে সঠিক বলে প্রমাণ করতে চায়, তাদের নিম্নের বিষয়গুলো বিবেচনার জন্য পেশ করা হলো। এক- কোনো যুক্তিবাদী ও বাস্তবজ্ঞান সম্পন্ন মানুষ কী উপরোক্ত তথ্য বিশ্বাস করতে পারেন?
দুই- বলিরাজ বা ধর্মপাল অষ্টম শতকে বাংলাদেশের ইতিহাসের একজন মহান, ন্যায়পরায়ণ, জনদরদী, সজ্জন এবং পন্ডিতপ্রবর শাসক ছিলেন? তাঁর স্ত্রী সুদেষ্ণাও একজন মহিয়সী নারী ছিলেন। এই মহৎ শাসক তাঁর স্ত্রীর গর্ভে দুশ্চরিত্র দীর্ঘতমার জারজ সন্তান ধারণ করার অনুমতি দেবেন অথবা একজন সতী নারী একজন লম্পটের ভ্রূণ গ্রহণ করবেন এটা কী বিশ্বাসযোগ্য? তিন-ভারতে আর্য আধিপত্য প্রতিষ্ঠার আগে এ অঞ্চলের নাম কী ছিলো সে বিষয়ে তারা কিছু ধারণা দেননি কেন? চার-ঋগবেদ, পুরাণ, মহাভারতে এ অঞ্চলের অধিবাসীদেরকে কেন অত্যন্ত হেয় ও ঘৃণ্যবলে প্রতিপন্ন করা হয়েছে? পাঁচ- কোনো মানুষকে কী দস্যু, অসুর, দেও দানব, রাক্ষস, পক্ষী, অনার্য আখ্যা দেয়া যায় কিনা বা উচিত কিনা? ছয়-বাংলা ভাষাকে আর্যরা আসুরিক ও ম্লেচ্ছদের ভাষা হিসেবে আখ্যায়িত করেছে কেন? সাত- সেনবর্মনরা কেন বাংলা ভাষা নিধনে মেতে ওঠেছিল? আট-রিয়াজ-উস-সালাতিন গ্রন্থে বর্ণিত বাংলা নামকরণ সম্পর্কে প্রদত্ত বক্তব্য হিন্দু ঐতিহাসিকরা খন্ডন করেননি বা ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করেননি। থলের বিড়াল বেরিয়ে যাবার ভয়ে কী? নতুন কোনো তথ্য বা যুক্তি উপস্থাপন করতে হলে অবশ্যই অতীতের বক্তব্য খন্ডন করতে হবে। এটাই ইতিহাসের স্বাভাবিক নিয়ম। নয়-বলিরাজ বা ধর্মপাল নিজেই বঙ্গের শাসক ছিলেন। তাই জারজ সন্তান সৃষ্টি করে তার নামে বঙ্গের নামকরণের যৌক্তিকতা থাকতে পারে না। বলিরাজের অনেক পূর্ব থেকেই এ অঞ্চলের নাম বঙ্গ হিসেবে পরিচিত। তাছাড়া অঙ্গ, বঙ্গ, কলিঙ্গ, পুন্ড্রু, সূক্ষ্ম নামে তাঁর কোনো সন্তান ছিলো না। ধর্মপালের পূর্বে এদেশ শাসন করে তার পিতা গোপাল, ধর্মপালের মৃত্যুর পর পুত্র দেবপাল, তারপর বিগ্রহপাল মসনদে বসেন। দশ-প্রাচীনকাল থেকেই বাঙালি পরাক্রমশালী একটি জাতি। যেসব ঐতিহাসিক স্বজাতিকে জারজ হিসেবে আখ্যায়িত করতে চায় তাদের মানসিক সুস্থতা নিয়ে আমাদের প্রশ্ন রয়েছে। এসব প্রশ্নের জবাব খোঁজা অতীব জরুরী।
ডঃ এম এ আজিজ ও ডঃ আহমদ আনিসুর রহমান বলেছেন, ‘আর্যদের আগমনের বহুপূর্বেই প্রাগৈতিহাসিক যুগে উপমহাদেশের এ অঞ্চলে ‘বঙ্গ' নামে জনপদ বিদ্যমান ছিল। আর্যদের পৌরাণিক কাহিনী থেকে যে ‘বঙ্গ' শব্দের উৎপত্তি নয় তা-ও সুস্পষ্ট। কাজেই ‘বঙ্গ' শব্দের উৎপত্তি ভারতীয় আর্য হিন্দু আমলে হয়েছে বলে গ্রহণযোগ্য নয় (বাংলাদেশের উৎপত্তি ও বিকাশ ১ম খন্ড, ইফাবা, ২য় সংস্করণ, জুন-২০০৮, পৃ-৪)। রমেশ চন্দ্র মজুমদার বলেছেন, ‘আর্য জাতির সংস্পর্শে আসিবার পূর্বেই বর্তমান বাঙালী জাতির সংস্পর্শে বাঙালি জাতির উদ্ভব হইয়াছিল এবং তাহারা একটি উচ্চাঙ্গ ও বিশিষ্ট সভ্যতার অধিকারী ছিল' (বাংলাদেশের ইতিহাস)। তিনি অন্যত্র বলেছেন, ‘(বাংলাদেশের) প্রাচীন লিপিতে দীনার ও রূপক এই দুই প্রকার নাম পাওয়া যায়। সম্ভবত স্বর্ণমুদ্রার নাম ছিল দীনার ও রৌপ্য মুদ্রার নাম ছিল রূপক। ১১৬ রূপক এক দীনারের সমান ছিল'। দীনার শব্দটি সেমিটিক পরিভাষার সাথে সম্পর্কিত। প্রখ্যাত গবেষক ও লেখক সিরাজ উদ্দীন আহমেদ বলেছেন, ‘বাঙাল জনগোষ্ঠীর নামকরণ বাঙ, কৌম বা গোত্র থেকে হয়েছে। ভাগিরথীর পূর্বদিকে গাঙ্গেয় বদ্বীপ এলাকায় সুপ্রাচীনকাল থেকে বাঙ জনগোষ্ঠী বাস করত। ....প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে বাঙ জাতি এ অঞ্চলে বাস করত এবং তাদের নামানুসারে বঙ্গ জনপদের নামকরণ' (পৃ-৫১, বরিশালের ইতিহাস প্রথম খন্ড, ভাস্কর প্রকাশনী, জুলাই-২০০৩)। অন্যত্র তিনি বলেছেন, ‘বাকলা-চন্দ্রদ্বীপ বাঙালী জাতির প্রধান আদি বাসস্থান। সুদূর প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে বাঙ জাতি এ অঞ্চলে বাস করত। বাঙালী শঙ্কর জাতি। নরতত্ত্ব, জাতিতত্ত্ব ও ভাষাতত্ত্বের বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ করলে বাঙালী জাতির উৎপত্তি সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায়' (পৃ-৪৯, পূর্বোক্ত)। এই বাঙ নামকরণ হযরত নুহর প্রপৌত্র বঙ থেকেই উদ্ভূত। আর্য হিন্দু প্রভাবিত ইতিহাসবিদ, লেখক, গবেষকরা এ তথ্যকে গোপন বা অস্বীকার করলেও এটিই প্রকৃত ও সত্য ইতিহাস।
সাম্রাজ্যবাদের তল্পিবাহক বুদ্ধিজীবী ও সুশীল সমাজ বাংলাদেশি মুসলমানদের শেকড়শূন্য ও বহিরাগত হিসেবে প্রতিপন্ন করতে সঙ্কল্পবদ্ধ। পার্বত্য উপজাতিরা ওই অঞ্চলে সর্বোচ্চ তিনশ বছর পূর্বে এ অঞ্চলে আগমন করে। আর মুসলমানরা সভ্যতার শুরু থেকেই বাংলাদেশের বাসিন্দা। তাই বাংলাদেশি মুসলমানরাই বাংলাদেশের আদিবাসী ও প্রাচীন অধিবাসী। মুসলমানরাই ভারতবর্ষের সুপ্রাচীন জাতিগোষ্ঠী।  

 

বাংলাদেশের জন্য বিরল সম্মান: ডিসকভারী চ্যানেলের ‘সুপার হিউম্যান' মার্শাল আর্ট গ্র্যান্ড মাস্টার ড. ইউরী

বাংলাদেশের জন্য বিরল সম্মান:
ডিসকভারী চ্যানেলের ‘সুপার হিউম্যান' মার্শাল আর্ট গ্র্যান্ড মাস্টার ড. ইউরী
 
সাদেকুর রহমান : একজন অসাধারণ, বিশ্ব রেকর্ডধারী ব্যক্তি তিনি। এ উপমহাদেশের প্রাচীন আত্মরক্ষামূলক শিল্পকলা ব্যুত্থান আর্ট যার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বিশ্বব্যাপী আজ পরিচিত ও সমাদৃত। সর্বান্তকরণে বাংলাদেশী এই মানুষটি পৃথিবীর অন্যতম শীর্ষস্থানীয় মার্শাল আর্ট গ্র্যান্ড মাস্টার। মার্শাল আর্টের ওপর দেশের একমাত্র পিএইচডি ডিগ্রীধারী ব্যক্তিত্ব মিলিটারী আন-আর্মড কমব্যাট, ল-এনফোর্সমেন্ট, কাউন্টার-টেরোরিস্ট অ্যান্ড সিকিউরিটি বিশেষজ্ঞ ও প্রশিক্ষক হিসেবে নিজ মানচিত্রের বাইরেও বিপুল সমাদৃত। তিনি ড. মুহাম্মদ আনোয়ার কামাল ইউরী। ড. ম্যাক ইউরী বা ড. ইউরী নামেই জগদ্বিখ্যাত তিনি।
নিজ দেশের প্রায় অপরিচিত হলেও তিনি তার অতিমানবীয় সিনবোন কিকের জন্য দুনিয়া জোড়া ‘থান্ডার সিনম্যান' হিসেবে ইতিমধ্যেই ব্যাপক পরিচিতি ও প্রশংসা অর্জন করেন। তাকে নিয়েই আন্তর্জাতিক টিভি চ্যানেল ডিসকভারী নির্মাণ করেছে একটি বিশেষ ডকুমেন্টারী। চ্যানেল কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বিশ্বের আরো আটজন মেধাবী, সমকালীন সেরা কীর্তিমান ব্যক্তিত্বের পাশাপাশি ড. ইউরীর পেশাগত জীবনীভিত্তিক ডকুমেন্টারীটি উক্ত চ্যানেলে প্রদর্শিত হচ্ছে। ওয়াকিবহাল মহল বলছেন, যে কোনো বিচারে এটি বাংলাদেশের জন্য বিরল সম্মান ও অর্জন।
আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মার্শাল আর্ট গ্র্যান্ড মাস্টার ড. ইউরী ডিসকভারী চ্যানেলে তার উপর ডকুমেন্টারী প্রদর্শনের প্রতিক্রিয়ায় দৈনিক সংগ্রামকে জানান, খুব ভালোই লাগছে। আবার কষ্টও লাগে- যখন দেখি দেশের মানুষের অবজ্ঞা-অবহেলা। দেশের মানুষ সম্মান না দিলে বিদেশীরা যতই সম্মানিত করুক তাতে কি তৃষ্ণা মিটে। কথা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ডিসকভারী কর্তৃপক্ষ প্রাথমিকভাবে ৪০ জন যশস্বী ব্যক্তিত্বকে নির্বাচন করেছিল। সেখান থেকে তারা তাদের মানদন্ড বিবেচনায় মোট নয়জনকে চূড়ান্তভাবে নির্বাচন করে ‘সুপার হিউম্যান শোডাউন' শিরোনামের ডকুমেন্টারী বানায়। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চ্যানেলটির নিয়ন্ত্রণ করে শক্তিধর একটি দেশ, তারা ঠিকমতো শিডিউল পর্যন্ত দেয়নি। তাই সুপার হিউম্যান (অতিমানব) অনুষ্ঠানটি নিয়মিত দেখানো শুরু হলেও কোন ব্যক্তিত্বকে কখন দেখানো হবে তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তবে একেকজন ‘সুপার হিউম্যান'কে পঞ্চাশ বার করে দেখানো হবে বলে জানান ড. ইউরী। গ্রান্ডমাস্টার ড. ইউরী ভারতের কাঞ্চিপুরম ও চীনের শাওলিনটেম্পল-এ অনুসন্ধানী গবেষণার মাধ্যমে ভারতীয় মার্শাল আর্ট-এর লুপ্ত প্রায় ইতিহাস ও ঐতিহ্য পুনরুদ্ধার করেন। তিনি মার্শাল আর্ট-এর সর্বোচ্চ পদাধিকারী (দশম লেভেল, ব্ল্যাক বেল্টধারী) এবং ব্যুত্থান মার্শাল আর্ট সিস্টেমের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি মার্শাল আর্ট জগতের বিশিষ্ট চিন্তাবিদ, বিশেষজ্ঞ অথরিটি হিসেবে বিবেচিত এবং পৃথিবীর ৬টি শীর্ষস্থানীয় কর্তৃপক্ষ কর্তৃক সর্বোচ্চ ক্যাটাগরিতে গ্রান্ডমাস্টার অফ দি ইয়ার হিসেবে অভূতপূর্ব স্বীকৃতি অর্জন করে পৃথিবীব্যাপী চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেন। ড. ইউরী বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় মার্শাল আর্ট গ্র্যান্ডমাস্টারদের আন্তর্জাতিক সংস্থা ওয়ার্ল্ড গ্রান্ডমাস্টারস কাউন্সিল, আমেরিকা-এর সর্বোচ্চ পুরস্কার ‘গ্রান্ড মাস্টার পিনাকেল অ্যাওয়ার্ড-২০০৯' লাভ করেন। অসাধারণ প্রতিভাবান ক্যাডেট হিসেবে তিনি বরাবরই কৃতিত্বপূর্ণ সাফল্যের সাথে পরিচয় দিয়ে এসেছেন। মিলিটারি সাইন্স, ফিজিক্যাল ট্রেনিং, অবস্ট্রাকল কোর্স, আন আর্মড কমব্যাট, মিলিটারি ড্রিলস প্যারেডের মতো বিষয়সমূহে। সেই সাথে, চৌকস নৈপুণ্যের জন্য তিনি বরাবরই পাইলট ইউনিট কালার পার্টির অগ্রভাগে জাতীয় পতাকা বহনের মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বটি সূচারুসরূপে পালন করতেন। তিনি হাতে গোনা কয়েকজন ডিস্টিংগুইস্ট ক্যাডেট পদকপ্রাপ্তদের অন্যতম হওয়ার বিরল সৌভাগ্য লাভ করেন। মাত্র ১১ বছর বয়সে। তিনি বার্মিজ ক্লাসিক্যাল আন আর্মড কমব্যাট ও অস্ত্রবিদ্যা ভিত্তিক (বান্ডো ও বানশে) মার্শাল আর্ট চর্চা শুরু করেন।
ব্যুত্থান মার্শাল আর্ট এবং কমব্যাট সেল্ফ ডিফেন্স (সিএসডি) ড. ইউরীর বৈপ্লবিক ও যুগান্তকারী চিন্তার ফসল, যা বিশ্বের দেশ ও সংস্কৃতির মানুষের আধুনিক জীবন-যাত্রার নিজের সুরক্ষা ও সল্প সময়ে নিরাপত্তা ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাদের জন্য আধুনিক শিক্ষা কৌশল হিসেবে সমাদৃত হয়েছে। সার্কভুক্ত দেশসমূহের দু'শতাধিক কোটি মানুষের মধ্যে ড. ইউরীই প্রথম ও একমাত্র ব্যক্তি যিনি বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ‘ওয়ার্ল্ড মার্শাল আর্ট হল অব ফেইম' পদক লাভ করে- গ্র্যান্ড মাস্টার অব দ্য ইয়ার ২০০৭ নির্বাচিত হন। তিনি ‘ন্যাশনাল সিকিউরিটি একাডেমি', আমেরিকা থেকে কমিশন অফিসার্স কোর্স সমাপ্ত করেন। বৃটিশ হোম অফিস অধীনস্ত সিকিউরিটি ইন্ডাস্ট্রি অথরিটি ভিআইপি প্রটেকশনের ওপর সর্বোচ্চ প্রফেশনাল ডিগ্রি অর্জন করেন। বৃটিশ আর্মি রয়েল ইঞ্জিনিয়ার্স-এর অধীনে বিস্ফোরক সার্চ এন্ড রিকগনিশন কোর্সও সম্পন্ন করেন। ফায়ার ট্রেনিং একাডেমি, ইংল্যান্ড থেকে ফায়ার মার্শাল কোর্স সম্পন্ন করেন ও বৃটিশ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীনে তিনি (এভিয়েশন লেভেল-৪) প্রশিক্ষণ শেষে সনদ অর্জন করেন। উল্লেখ্য, ড. ইউরী ইন্টারন্যাশনাল কমব্যাট মার্শাল আর্টস ইউনিয়নের এসোসিয়েশন একজন প্রথিতযশা হিসেবে অনন্য স্বীকৃতি লাভ করে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেন। তিনি এফবিআই, এসএএস, সিআইএ, বৃটিশ আর্মি, লাটভিয়ান, স্পেশাল ফোর্স, আইরিস কারেকশন ডিপার্টমেন্ট ইত্যাদি আন্তঃদেশীয় বিভিন্ন আইনপ্রয়োগকারী ও গোয়েন্দা সংস্থাসমূহের সঙ্গে ক্রস ট্রেনিং-এর পাশাপাশি দেশের সরকারি নিরাপত্তা রক্ষী বাহিনীসমূহের প্রশিক্ষণে নিয়োজিত দেশ-এর প্রথম ও শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান ‘রেঞ্জারস একাডেমি অব সিকিউরিটি এন্ড ডিফেন্স'-এর কমান্ডেন্ট হিসেবে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ), সেনাবাহিনী, নৌ বাহিনী, পুলিশ, কোস্ট গার্ড, বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী, এনএসআই, পুলিশ স্টাফ কলেজ, স্কুল অব মিলিটারি ইন্টিলিজেন্সসহ স্বরাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়স্থ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রশিক্ষাণাদি পরিচালনার দায়িত্ব পালন করে আসছেন। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী কর্তৃক ব্যবহৃত সিকিউরিটি ব্যাটন ড. ইউরীই উদ্ভাবন করেন। এছাড়া, ড. ইউরী ইন্টারন্যাশনাল বডি গার্ড এসোসিয়েশন, ইন্টারন্যাশনাল পুলিশ ট্যাকটিস ট্রেইনার্স এসোসিয়েশন (আইপিটিটিএ), যুক্তরাজ্যের ল-এনফোর্সমেন্ট ট্রেনিং এজেন্সিজ (আইইএলইটিএ)-এর সার্টিফাইড ইন্সট্রাক্টর, আমেরিকান সোসাইটি ফর ল-এনফোর্সমেন্ট ট্রেইনার্স (এলএলইটি), আমেরিকান সোসাইটি অব ইন্ডাস্ট্রিয়াল সিকিউরিটি (এএসআইএস) ইত্যাদি সংগঠনসমূহেরও তিনি সদস্য।

Source: http://www.dailysangram.com
7 October 2012 
 

Monday, October 1, 2012

ফ্ল্যাট কিনেও ভাড়া থাকছেন অনেক ক্রেতা আবাসন খাতে ৩ বছর ধরে নতুন গ্যাস সংযোগ বন্ধ হুমকির মুখে ৯০ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ

ফ্ল্যাট কিনেও ভাড়া থাকছেন অনেক ক্রেতা:
আবাসন খাতে ৩ বছর ধরে নতুন গ্যাস সংযোগ বন্ধ -
হুমকির মুখে ৯০ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ
 
কামাল উদ্দিন সুমন : আবাসন শিল্পে চরম দুঃসময় চলছে। একদিকে গত ৩ বছর ধরে নেই নতুন গ্যাস সংযোগ। অন্যদিকে ফ্ল্যাট ও প্লটের ক্রেতা কম হওয়ায় বিক্রি কমেছে। গ্যাস সংযোগ না পাওয়ায় অনেক কোম্পানি তাদের বিক্রিত ফ্ল্যাট ক্রেতার কাছে হস্তান্তর করতে পারছে না। আর ফ্ল্যাট কিনেও ভাড়ায় থাকছেন অনেকে। আর গ্যাসের অভাবে এ খাতে ৯০ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ এখন হুমকির মুখে বলে জানিয়েছেন এ খাতের একাধিক বিনিয়োগকারী।
সূত্র জানায়, ২০০৯ সালের ২১ জুলাই থেকে সব ধরনের নতুন  সংযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়। একইভাবে ২০১০ সালের ১৩ জুলাই থেকে দেশব্যাপী আবাসিক গ্রাহকদের গ্যাসের সংযোগ দেয়া বন্ধ রাখা হয়। তবে আবাসিক গ্রাহকদের জন্য এই বলে নিশ্চয়তা দেয়া হয় যে দেশে যখন দৈনিক দুই হাজার দুইশ' এমএমসিএফডি গ্যাস উৎপাদন করা সম্ভব হবে তখন থেকেই সব আবাসিক গ্রাহকদের সংযোগ আবার দেয়া হবে। সরকার সম্প্রতি শিল্প কারখানায় নতুন গ্যাস সংযোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও কবে তা বাস্তবায়ন হবে তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন অনেক ব্যবসায়ী।
সূত্র মতে, গত তিন বছর ধরে আবাসন শিল্পে গ্যাসের নতুন সংযোগ বন্ধ রয়েছে। শিল্প ও আবাসন খাতে হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করে দিশেহারা বিনিয়োগকারীরা। সুদসহ ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে অনেকেই দেউলিয়া হওয়ার পথে। শুধু গ্যাস সংযোগের অভাবে ফ্ল্যাট বিক্রি করতে পারছেন না অনেক প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তারা। নতুন গ্যাস সংযোগের অভাবে ৯০ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ এখন হুমকির মুখে। এর মধ্যে ৩০ হাজার কোটি টাকার ব্যাংক ঋণ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন উদ্যোক্তারা। এ সময় ফ্ল্যাট বিক্রি কমেছে ৪২ শতাংশ।
আবাসন ব্যবসায়ীদের একটি সূত্র জানায়, শুধুমাত্র এ সরকারের আমলেই তিন বছর ধরে গ্যাস সংযোগ বন্ধ রেখে নতুন নজির স্থাপন করা হয়েছে। এর আগে বিভিন্ন সরকারের সময় কয়েক মাসের জন্য বন্ধ থাকার ঘটনা ঘটলেও এত দীর্ঘ সময়ের জন্য গ্যাস সংযোগ বন্ধ রাখার ঘটনা এটাই প্রথম। বর্তমান সরকারের দাবি, গত ৩ বছরে গ্যাসের উৎপাদন বেড়েছে সাড়ে ৪০০ মিলিয়ন ঘনফুট। আবাসন খাতে নতুন সংযোগ দিলেও প্রয়োজন হবে মাত্র ১০ মিলিয়ন ঘনফুট।
গৃহায়ন খাতের উদ্যোক্তাদের সংগঠন রিয়েল এস্টেট এন্ড হাউজিং এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব) সূত্র জানায়, ফ্ল্যাটের কেনা-বেচা সম্প্রতি ৪২ শতাংশ কমেছে। উন্নয়ন কাজ শেষ হলেও গ্যাস সংযোগ না থাকায় কয়েক লাখ ফ্ল্যাট ও এ্যাপার্টমেন্ট বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না। এতে উদ্যোক্তাদের অন্তত ৯০ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ ঝুঁকিতে রয়েছে। এ অবস্থায় বিপুল পরিমাণ ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করতে না পারায় যেকোনো সময় আবাসন খাতে বড় রকমের ধস নামতে পারে। গৃহায়ন খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আড়াই শতাধিক শিল্পের প্রায় ১০ হাজার প্রতিষ্ঠান বন্ধ এবং আড়াই কোটি লোকের বেকার হয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে ৫০ হাজারের বেশি রেডি ফ্ল্যাট এখন অবিক্রীত অবস্থায় রয়েছে।
জানা যায়, গ্যাস সংযোগ না থাকায় মন্দার কবলে পড়েছে দেশের আবাসন শিল্প। অর্থনৈতিক মন্দার কারণে আবাসন খাতে এমনিতেই চলছে ক্রেতা সংকট। ফ্ল্যাট ও প্লটের ক্রেতা নেই। তাই বিক্রিও নেই। এ অবস্থায় অনেক প্রতিষ্ঠানে শুরু হয়েছে কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাঁটাই। বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে বহু আবাসন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। এ অবস্থায় গ্যাস সংযোগ সমস্যা দীর্ঘায়িত হলে গোটা আবাসন খাতে বিপর্যয় দেখা দিতে পারে বলে জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা।
রিহ্যাবের একজন কর্মকর্তা বলেন, সরকার আবাসন সংকট মোকাবিলায় সত্যিই আন্তরিক নয়। গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়ে এ খাতে চলছে লুকোচুরি। নির্মাণ কাজ শেষ করেও গ্যাস সংযোগ না পাওয়ায় এ্যাপার্টমেন্ট বিক্রি করতে পারছেন না উদ্যোক্তারা।
রিহ্যাব সূত্রে জানা গেছে, ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপ মেটাতে গত ২০ বছরে ঢাকায় প্রায় এক লাখ নতুন এ্যাপার্টমেন্ট তৈরি হয়েছে। জাতীয় অর্থনীতিতে এ খাতের অবদান অন্তত ১৩ শতাংশ। এ খাতে দুর্যোগ নেমে এলে অন্তত পাঁচ কোটি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে সূত্র দাবি করে।
 
শুক্রবার 28 September 2012
 

Thursday, August 30, 2012

ব্লু মুন বা নীল চাঁদ

ব্লু মুন বা নীল চাঁদ 

প্রচলিতভাবে আমরা প্রতি মাসে একটিমাত্র পূর্ণিমা দেখতে পাই, কিন্তু কখনো কখনো এমন ঘটে যে একটি মাসে দুইটি পূর্ণিমা ঘটে থাকে। কোন মাসের এই দ্বিতীয় পূর্ণিমাটিই হচ্ছে ব্লু মুন। এইক্ষেত্রে প্রথম পূর্ণিমাটি মাসের একদম শুরুতে বা শুরুর কাছাকাছি সময়ে হয়ে থাকে। কারণ চান্দ্র মাস ২৯.৫ দিনে সম্পন্ন হয়। ফলে ফেব্রুয়ারি মাস ছাড়া অন্য যেকোন মাসেই দুইটি পূর্ণিমা ঘটতে পারে। কারণ ফেব্রুয়ারি মাসের দৈর্ঘ্য চান্দ্রমাসের চেয়ে কম।
ব্লু মুন কেন ঘটে
আমরা জানি সৌর বর্ষপঞ্জিতে বারোটি পূর্ণ চন্দ্র মাস সম্পন্ন হয়ে থাকে অর্থাৎ বারোটি পূর্ণিমা ঘটে। তবে সৌর মাসের তুলনায় চান্দ্রমাসে দৈর্ঘ্য কম। চান্দ্র মাস ২৯.৫ দিনে সম্পন্ন হয়। সাধারণ হিসেবে বলা যায়, চান্দ্র বছর সৌর বছরের তুলনায় গড়ে এগারো দিন কম হয়ে থাকে। এই অতিরিক্ত দিনগুলোর কারণে গড়ে প্রতি ২.৭ বছরে এমন একটি মাস পাওয়া যায় যখন একই মাসে দুইটি পূর্ণিমা ঘটে। একইভাবে প্রতি ১৯ বছরে ৭ বার এমন পূর্ণিমা পাওয়া যায়।
ব্লু মুনেরও ব্যতিক্রম
ব্লু মুন নিজেই একটি ব্যতিক্রম ঘটনা হলেও এর ক্ষেত্রেও কখনো কখনো আরেকটি অদ্ভূত ঘটনা ঘটে থাকে, যেমন একই বছরে দুইবার ব্লু মুনের দেখা পাওয়া। গড়ে প্রতি ১৯ বছরে মাত্র একবারই এমনটি ঘটে। সর্বশেষ ১৯৯৯ সালের জানুয়ারি এবং মার্চ মাসে পর পর দুইবার ব্লু মুন দেখা গিয়েছিল। তবে এই ঘটনা শুধু জানুয়ারি এবং মার্চ মাসেই ঘটা সম্ভব। কারণ এই দুই মাসের মধ্যে সবচেয়ে ছোট মাস ফেব্রুয়ারি রয়েছে, এর দৈর্ঘ্য সাধারণত মাত্র ২৮ দিন। তাই প্রতি ১৯ বছরে ফেব্রুয়ারি মাসটি একবার প্রভাবক হিসেব কাজ করে। তবে যদি জানুয়ারি এবং মার্চ মাসে পর পর এমন ঘটনা ঘটে সেক্ষেত্রে ফেব্রুয়ারি মাসে কোন পূর্ণিমা দেখা যাবে না। কারণ জানুয়ারি মাসের একেবার শেষ দিকে পূর্ণিমা ঘটলে চান্দ্রমাসের হিসেবে ফেব্রুয়ারি মাসে কোন পূর্ণিমা না ঘটে মার্চ মাসের শুরুতে পূর্ণিমা ঘটবে। এরকমটি আবার ঘটবে ২০১৮, ২০৩৭ সালে। এভাবে ১৯ বছর পর পর নিয়মিতভাবে।
ব্লু মুন নামকরণ কেন
এই বিশেষ পূর্ণিমাকে ব্লু মুন বা নীল চাঁদ নাম দেয়া হলেও দৃশ্যত এই পূর্ণিমায় চাঁদকে মোটেও নীল রঙের দেখায় না, বরং অন্য পূর্ণিমার মতই পুরোপুরি সাদৃশ্যপূর্ণ। তাহলে নীল চাঁদ নামের কারণ কি? ইংরেজিতে Blue Moon পদটি দ্বারা কোন অসাধারণ ঘটনাকে প্রকাশ করা হয়। এই নামটি প্রায় চারশ’ বছর ধরেই প্রচলিত ছিল। তবে গত পচিশ বছর ধরে বর্ষপঞ্জিতে এই নামটি বিস্তৃতি লাভ করেছে। ‘অমাবস্যার চাঁদ’ বাক্যটি যেমন দুস্প্রাপ্য কিছু বোঝাতে বাংলায় প্রবাদ বাক্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়, ঠিক তেমনি ইংরেজিতে ‘once in a blue moon’ বাক্যটিও ব্যবহৃত হয়। ধারণা করা হয় প্রাচীন সময়ে মানুষের মনের বিভিন্ন কুসংস্কার বা বিশ্বাস থেকে এই ব্লু মুন নামটি এসে থাকতে পারে। তবে সাম্প্রতিক সময়ের কিছু কিছু ঘটনা থেকে এই নামকরনের কিছুটা মিল খুঁজে পাওয়া যায়, যা কিছুটা ঐতিহাসিকও বটে।
১৮৮৩ সালে ইন্দোনেশিয়ায় ক্রাকাতোয়া অগ্নুৎপাতের কারণে পরবর্তী দুই বছর সূর্যাস্তের সময় সবুজ এবং চাঁদকে নীলাভ দেখা গেছে। এছাড়া ১৯২৭ সালে ভারতীয় মৌসুমী বায়ু দেরীতে আসার কারণে গ্রীষ্মকাল অতি দীর্ঘ হয়ে পড়ে, যা বায়ুমন্ডলে ধূলার পরিমাণ বাড়িয়ে তোলে, তখন রাতের আকাশে চাঁদকে নীলাভ দেখাত। ১৯৫১ সালে উত্তর আমেরিকার উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের চাঁদকেও নীল দেখা গিয়েছিল যখন পশ্চিম কানাডার বনাঞ্চলে দাবানল লেগেছিল এবং এর ধোঁয়া আকাশকে আচ্ছন্ন করে ফেলে।
উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে এটা সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে যে ব্লু মুন প্রকৃতপক্ষে দেখতে মোটেও নীল নয়। তবে আকাশে ধুলোবালি বা ধোঁয়ার কারণে চাঁদকে সাময়িকভাবে নীলাভ মনে হতে পারে। এটি সময়ের ধারাবাহিকতায় সংঘটিত হওয়া একটি মহাজাগতিক ঘটনা ছাড়া আর কিছুই নয়।
কুসংস্কার ত্যাগ করুন
মানুষের জীবন ও কাজের উপর সাধারণ পূর্নিমা বা ব্লু মুন কোনটিরই প্রভাব নেই, এটি শুধুমাত্র প্রাকৃতিক নিয়মে ঘটে চলা একটি মহাজাগতিক ঘটনা মাত্র। তাই মানুষের শরীরের উপর পূর্ণিমার ক্ষতিকার প্রভাব বা ভাগ্য নিয়ন্ত্রণের মত বিশ্বাস নেহায়েৎ কুসংস্কার। তবে দারিদ্রতা-অশিক্ষা-অজ্ঞানতা-সাম্প্রদায়িকতা-রোগ-মানসিক যন্ত্রণা নানা কারণে আমাদের কুসংস্কারাচ্ছন্ন মন খুব সহজেই মহাজাগতিক ঘটনাবলীকে ভর করে নিজেদের সমস্যা সমাধানের পথ খুঁজে নেয় বা তার বশবর্তী হয়ে পড়ে। তাই কোনরকম কুসংস্কারে বিশ্বাস না করে, ভ্রান্ত ধারনায় পরিচালিত না হয়ে স্নাত হোন এই বিশেষ পূর্ণিমার অপূর্ব জোছনায়। বিজ্ঞানমনস্কতা আর বিজ্ঞানঘনিষ্ঠতায় বেড়ে উঠুক আগামীর প্রজন্ম, সেই প্রত্যাশা আমাদের।

 Source: http://cosmicculture.org

Sunday, August 12, 2012

ভাষার ব্যবহার ও গালি বৃত্তান্ত

ভাষার ব্যবহার ও গালি বৃত্তান্ত

লিখেছেন: মোজাফফর হোসেন


মানুষের সর্বশ্রেষ্ঠ আবিষ্কার হল ভাষা বা ভাষার ব্যবহার। মানুষ অন্যসব প্রাণীদের থেকে এগিয়ে তার অন্যতম কারণ হল মানুষের ভাষা জ্ঞান। ভাষার ব্যবহারের মধ্য দিয়ে সভ্যতার বিকাশ ও প্রকাশ ঘটেছে। ভাষার ব্যবহার করেই মানুষ হয়েছে বিখ্যাত, জাতিগত ভাবে উন্নত। সক্রেটিস যদি ভাষাহীন হতেন, গ্যালিলিও যদি তার বিশ্বাসের কথা না বলতেন তাহলে তাদের ঐভাবে মরতে হত না। ভাষা না থাকলে জন্ম হত না কোন ধর্ম গ্রন্থ কিংবা দর্শন শাস্ত্রের। ভাষা না থাকলে বিখ্যাত হতেন না মিল্টন, রবীন্দ্রনাথ, গ্যেটে, তলস্তয়সহ পৃথিবীর কোন কবি সাহিত্যিক। ভাষা না থাকলে জন্ম হত না প্লেটো, ফ্রয়েড, ডারউইন, কার্ল মার্ক্স-এর। ভাষার মধ্য দিয়েই আন্দোলন করেছেন লেলিন, গোর্কি, গান্ধি, ম্যান্ডেলাসহ পৃথিবীর সকল যোদ্ধা। আরও পরিষ্কার করে বলতে গেলে, মার্টিন লুথার কিং এর ভাষণ ‘I have a Dream’ কিংবা শেখ মুজিবের রেডকোর্স ময়দানের সেই ভাষণ, ‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ তাঁদের স্ব স্ব জাতির জন্য মুক্তির পথ বাতলে দিয়েছে। আবার এই ভাষাকেই ব্যবহার করে হিটলার পরিচালনা করেছেন পৃথিবীর জঘন্যতম হত্যাযজ্ঞ। ঘটে গেছে অসংখ্য যুদ্ধ। সুতরাং দেখা যাচ্ছে ভাষার ব্যবহার মানুষের অন্যতম হাতিয়ার। বলাই বাহুল্য, মানুষ ভাষাহীন হলে তার চেতনার কোন মূল্য থাকতো না তা যতই মঙ্গলকামী হউক না কেন, এবং অবশ্যই, পৃথিবীর ইতিহাস ভিন্নতর হত।
খ.
গালিগালাজ বা গালমন্দ হল ভাষার অন্যতম বহুল ব্যবহার। গালিগালাজ মানুষের মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে বটে তবে ক্ষেত্রবিশেষ এর প্রয়োজনীয়তাকে অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। মানুষ যেদিন থেকে ভাষার ব্যবহার শিখেছে সেদিন থেকেই শুরু হয়েছে গালির ব্যবহার। এই গালিগালাজের প্রকার ও ধরণ আবার সমাজ ভেদে ভিন্নতর। এক স্থানের স্তুতি কথা অন্যস্থানে গালি হিসাবে ব্যবহারের নজির দেখা যায়। যেমন, যুক্তরাজ্যে fag মানে সিগারেট, কিন্তু যুক্তরাষ্টে fag বলতে হোমোসেক্সুয়াল পুরুষ বোঝায়। বাংলাদেশের বিভিন্নস্থানে ‘খাসি’ শব্দটা অস্তিবাচক হিসাবে ব্যবহার করা হলেও মেহেরপুরে এটাকে গালি হিসাবে ব্যবহার করা হয়। আমাদের দেশে, বন্ধুদের মাঝে বা ইনফর্মাল আড্ডায় ‘শালা’, ‘গাধা’, ‘কুত্তা’ এ জাতিয় শব্দ গালি মনে না হলেও বড়দের মাঝে বা ফর্মাল কোন বৈঠকে তা ব্যবহার করা হলে গালি হিসাবে গণ্য করা হবে। আবার সমাজের অশিক্ষিত মানুষের কাছে যা বুলি তা অনেকসময় শিক্ষিত মানুষের কাছে গালি হিসাবে চিহ্নিত হয়। যেমন আমাদের দেশে নিম্নশ্রেণীর মানুষেরা ‘মাগি’, ‘ভাতার’, ‘মিনসে’ শব্দগুলো সাধারণ অর্থেই ব্যবহার করে কিন্তু এই শব্দগুলো শিক্ষিত সমাজে গালি হিসাবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। জেন্ডার ভেদেও গালির ভিন্নতা লক্ষ্য করা যায়। পুরুষদের সাধারণ আড্ডায় অনেক শব্দ ব্যবহার করা হয় যা নারী মহলে গালি হিসাবে চিহ্নিত। যেমন, হুদায়, চোঁদনা, বাড়া, বকচোদ ইত্যাদি।
গালি হিসাবে যে শব্দগুলো ব্যবহার করা হয় লক্ষ্য করলে দেখা যাবে তার বেশির ভাগই এসেছে প্রাণী বা নিম্নশ্রেণীর জীব থেকে, যেমন- কুত্তা, গাধা, ছাগল, পাঠা, শুয়োর, ছুঁচো, পেঁচা, মষ (মহিষ), বান্দর ইত্যাদি; কিছু এসেছে নেতিবাচক শব্দ থেকে, যেমন- ফালতু, রোগা, মূর্খ, বোকা, হাঁদা, মরণ, পচা, চাষা ইত্যাদি; কিছু এসেছে রোগের নাম এবং শারীরিক ত্রুটি থেকে, যেমন- পাগল, কলেরা, যক্ষ্মা, বসন্ত, মৃগী, জিনে ধরা, কানা, খুড়া, কালা ইত্যাদি; কিছু এসেছে নিম্নশ্রেণীর পেশা থেকে, যেমন- চোর, ডাকাত, কুলি, মুটে, মুচি, মেথর ইত্যাদি; কিছু এসেছে সম্পর্ক থেকে, যেমন- শ্যালা, শালী, সতীন, মাগ, ভাতার ইত্যাদি; কিছু এসেছে মানুষের যৌনাঙ্গ থেকে, যেমন- বাল, বাড়া, ভোদা, ধন ইত্যাদি; অনেক সময় বিদেশী শব্দ থেকেও গালি আসে, যেমন- হারাম, মাদার-ফাকার, হেল, বাস্টার্ড, ফ্রড, শয়তান, কামিনে, কাফের; কিছু গালি এসেছে ইতিহাস এবং পুরাণের পাতা থেকে, যেমন- মীরজাফর, হিটলার, রাজাকার, নমরুদ, ফেরাউন ইত্যাতি; আবার শব্দ coinage-এর মাধ্যমে কোন কোন সাহিত্যিক গালি নিয়ে আসেন, যেমনটি শেকসপিয়র করেছেন। আবার অনেক শব্দ বুৎপত্তিগত অর্থে অশালীন না হলেও প্রয়োগের কারণে গালি হিসাবে গণ্য করা হয় যেমন, মাগী। এই শব্দটির বুৎপত্তিগত অর্থ হচ্ছে নারী। কিন্তু প্রায়োগিক অর্থে খারাপ স্বভাবের নারী বা বেশ্যার সমার্থক হিসাবে গণ্য করা হয়। অথচ, মাগীর বিপরীত শব্দ মাগ সাধারণ অর্থেই ব্যবহৃত হয় বেশি।
গালি বলতে যে সবসময় অশালীন শব্দকে বোঝান হয় বিষয়টি তা নয়। এটা নির্ভর করে শব্দটাকে কিভাবে, কোন উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হচ্ছে। অশালীন শব্দ প্রয়োগের কারণে গালি হিসাবে গণ্য নাও হতে পারে আবার শালীন শব্দ ব্যবহারের মারপ্যাচে গালি হিসাবে গণ্য হতে পারে। যেমন যখন বলা হচ্ছে, ‘বেশ্যালয় গমনে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিৎ’। তখন বেশ্য শব্দটি গালি হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে না। কিন্তু যখন বলা হচ্ছে, ‘তুই একটা বেশ্যার জাত’, তখন বেশ্যা শব্দটা গালি হিসাবে চিহ্নিত হচ্ছে। শিক্ষিত সমাজে কথার মারপ্যাচে গালি দেওয়ার প্রবনতা বেশি। এজন্য ভাষা-জ্ঞান ভাল হওয়া চায়। যেমন, ক্রিকেট মাঠে রড মার্শ একবার ইয়ান বোথামকে বলেছিলেন, ‘হায় ইয়ান, তোমার বউ আর আমার বাচ্চারা কেমন আছে?’ জবাবে বোথাম বলেছিলেন, ‘বউ ভালোই আছে কিন্তু বাচ্চারা সব বিকলাঙ্গ হয়ে জন্মেছে দেখছি।’
গালি হিসাবে এসব শব্দের ব্যবহারের অন্যতম কারণ হল মানুষের ভাষার সীমাবদ্ধতা। মানুষকে তার বৈচিত্র্যময় অনুভূতির প্রকাশ ঘটাতে বিভিন্ন প্রকারের রূপকের (image) আশ্রয় নিতে হয়। গালি হচ্ছে ভাষার মেটাফরিক উপস্থাপন। যেমন- সে আস্ত একটা গাধা (metaphor), লোকটি কুত্তার মত ঘেউ ঘেউ করছে (simile)। পেট হাগস-এর মতে, ‘Slang is a non-standard language composed of exaggerated metaphors’। কে.জি. চেস্টারসন বলেছেন, ‘all slung is metaphor and all metaphor is poetry’।
গ.
সাহিত্যে গালির ব্যবহার বিশেষভাবে লক্ষণীয়। কারও কারও সাহিত্য অত্যধিক গালির কারণে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সাহিত্যিকদের হাত ধরে আমদানি হয়েছে হরেক রকমের গালি। যেমন, শেক্সপিয়ারের মাধ্যমে ইংরেজি ভাষায় যুক্ত হয়েছে অনেক নতুন গালি। গ্রীক ড্রামা ’লিসিসট্রাটা’ নিষিদ্ধ করা হয়েছিল অতিরিক্ত খোলামেলা ভাষা বা bawdy language ব্যবহারের কারণে। বাংলাসাহিত্যে গালিগালাজের জন্য অভিযুক্ত করা হয়েছে, তসলিমা নাসরিন, হুমায়ূন আজাদসহ অনেককেই ।
চলতি সময়ে চলচ্চিত্রে গালির ব্যবহার চূড়ান্ত পর্যায়ে উপনীত হয়েছে। ইংরেজি সিনেমা এই দিক দিয়ে সবার উপরে। মাদার ফাকার, ফাক্, সাকার, ব্ল্যাডি হেল, ডিক, শব্দগুলো গালি হিসাবে হরহামেশাই ব্যবহৃত হচ্ছে। যেমন- ‘mother fucker snakes in the mother fucker plain!’ (Movie: Snakes on a Plane)। বাংলা চলচ্চিত্রে একসময় অশ্লীল শব্দের ব্যবহার চুড়ান্ত পর্যায়ে উপনীত হয়েছিল। বর্তমানে সেন্সর বোর্ড-এর তৎপরতার কারণে বেশ কমে গেছে। বাংলা সিনেমায় ইংরেজি সিনেমার মত সব চরিত্র যখন তখন গালি ব্যবহার করে না। সাধারণত, শুধুমাত্র ভিলেনদের মুখেই গালি শোনা যায়। বাংলা সিনেমায় বহুল ব্যবহৃত কিছু গালি হচ্ছে- হারামজাদা, হারামখোর, শুয়ারের বাচ্চা, কুত্তার বাচ্চা, নটির মেয়ে/ছাওয়াল।
বর্তমানে খেলাধুলাতেও গালির ব্যবহার লক্ষণীয়। বিপরীত খেলোয়াড়দের মধ্যে মনস্তাত্ত্বিক অস্থিরতা বা মনোযোগের বিগ্ন ঘটানোর জন্য এই গালি দেওয়া হয়। সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা ফুটবল থেকে শুরু করে, হালে ভদ্রলোকের খেলা বলে খ্যাত ক্রিকেট খেলাতেও গালির ব্যবহার লক্ষ্য করার মত। একে খেলার ভাষায় স্লেজিং বলা হয়। যেমন, একবার এক বোলার ব্যাটসম্যানকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন, ‘এই বলেও যদি তুমি ছক্কা মারতে পার, তাহলে তুমি যা চাও তাই পাবে!’ জবাবে ঐ ব্যাটসম্যান বলেছিলেন, ‘যাও তোমার বউকে বিছানায় রেডি হতে বল’গে!’ আর সাইমন্ডস আর হরভজনের একে অপরকে ‘মানকি’ বলে গালিগালাজ করার ব্যপারটা তো সকলেরই জানা।
ঘ.
ভাষা ক্লাস এজেন্ট হিসাবে কাজ করে। তাই তো সমাজের অর্থনৈতিক অবস্থার তারতম্যের কারণে গালির পার্থক্য ঘটে থাকে। অবশ্যই অর্থনীতি অন্যসব কিছু নির্ধারণের পাশাপাশি মানুষের ভাষা নির্ধারণ করে থাকে। যারা সমাজে উঁচু স্থানে অধিষ্ঠিত বা যাদেরকে আমরা উচ্চবিত্ত বলছি তারা নিম্নমধ্যবিত্ত বা শ্রমিকশ্রেণীকে তুচ্ছার্থে নানাবিধ গালি ব্যবহার করে থাকে। বাংলাদেশে শ্রমিকশ্রেণীদের সাথে মালিকশ্রেণী খুব বাজে ভাষায় কথা বলে। এমনকি রিকশাচালক, মুটে, কুলি-মজুর সবাই এই ভাষা-বৈষম্যের স্বীকার হয়। এটা এক ধরনের অপরাধ বটে।
ভাষা জেন্ডার এজেন্ট হিসাবেও কাজ করে। ফলত, আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত গালিগুলোর দিকে লক্ষ্য করলে দেখতে পাব, গালিগুলো সুস্পষ্টভাবে পুরুষত্বের হাতিয়ার হিসাবে কাজ করছে। সমাজে মাদার ফাকার, বেশ্যা, নটী, খানকি, মাগি, হারামজাদি, ছিনাল, ভুদাই প্রভৃতি গালিগুলো সর্বাধিক ব্যবহৃত হয়। মা তুলে গালি দেওয়াটা একটা ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। কথায় কথায় বলতে শোনা যায়, ‘তোর মাকে **দি,’ ‘জন্মের ঠিক নেই’, ‘বেশ্যার ছাওয়াল’, ‘মাগির কামড় বেশি’- এ গালিগুলো সামগ্রিকভাবে নারী জাতিকে হীন করে তোলে।
গালি নিয়ে সমাজের শিক্ষিত মহলে বেশ অসন্তোষ দেখা যায়। কেউ কেউ মনে করেন, আইন করে পাবলিক প্লেসে গালি নিষিদ্ধ করা উচিৎ। কারও কারও ধারনা গালি ভাষায় সৌন্দর্য ও পবিত্রতা নষ্ট করে সুতরাং তা ভাষা থেকে ছেঁটে দেওয়া উচিৎ। যদি তাদের কথা মত গালি নিষিদ্ধ করা হয় তাহলে কি ঘটতে পারে তা একবার ভেবে দেখা দরকার। তাহলে গালির প্রয়োজনীয়তা পরিষ্কার হয়ে উঠবে। গালি কখনই ভাষার সৌন্দর্য নষ্ট করে না বরং তা আরও picturesque করে তোলে। ভাষাকে ক্ষেত্রবিশেষ করে তোলে প্রাণবন্ত-সজীব। গালি না থাকলে সবচেয়ে বড় যে ক্ষতিটা হত তা হল, মানুষে মানুষে দৈহিক হাঙ্গামা বেড়ে যেত বহুগুণে। মানুষ ভাষা বা অভিব্যক্তির মধ্য দিয়ে রাগ মেটাতে না পেরে একে অন্যের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়তো। হারামখোর, শুয়োরের বাচ্চা বলে যে কাজটি অনায়াসে হয়ে যায়, সেই কাজটি হতে লাঠি চালাচালি হত। বিশৃঙ্খলা বেড়ে যেত কয়েকগুণে।
শুধু রাগ না ভালোবাসা প্রকাশের ক্ষেত্রেও গালির জুড়ি নেই। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, বেশির ভাগ মানুষই স্ত্রী বা প্রেমিকার সাথে যৌনমিলনের চরম মুহূর্তে একে অপরের উদ্দেশ্যে প্রচুর অশালীন শব্দ বা গালি ছুড়ে মারে এবং এতে তাদের উত্তেজনা কয়েকগুণ বৃদ্ধি পাই। জেমস জয়েস ও তাঁর স্ত্রীর মধ্যকার পত্রগুলো পড়লে বোঝা যায় যে তাঁদের ভালোবাসা প্রকাশের অন্যতম মাধ্যম ছিল স্ল্যাং বা গালি। অনেক সময় নানা কিংবা দাদা সম্পর্কের মুরুব্বিরা নাতি সম্পর্কের ছোকরাদের দিকে গালি ছুড়ে মজা পান। অনেকে মজা করার জন্য সচেতন ভাবেই পরিবারে বা বন্ধু মহলে গালিগালাজ করে। এ জন্য বলা হয়- ‘humors are nothing but slang’। সুতরাং দেখা যাচ্ছে, গালি ভাষার নতুন এক উপযোগ সৃষ্টি সাপেক্ষ মানুষের জীবনে রসের সঞ্চার করেছে।
Source: http://mukto-mona.com 

Monday, June 18, 2012

সেরেঙ্গেটি মাইগ্রেশন

তানজানিয়ার সেরেঙ্গেটি অঞ্চলের নাম হয়তো কেউ কেউ শুনে থাকবেন। কারণ সেখানকার ওয়াইল্ড লাইফ রিজার্ভেই ঘটে চমকপ্রদ এবং বিস্ময়কর ঘটনা। সেখানে প্রতিবছর প্রায় ২০ লাখ তৃণভোজী প্রাণী পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মাইগ্রেশনে অংশগ্রহণ করে খাবার ও পানির খোঁজে। তার মধ্যে প্রায় দেড় লাখ প্রাণী হল সেরেঙ্গেটির বিখ্যাত ওয়াইল্ড বিস্ট। তানজানিয়ার সেরেঙ্গেটি ওয়াইল্ড লাইফ রিজার্ভ থেকে শুরু করে এরা দক্ষিণ কেনিয়ার মাসাইমারা অঞ্চল হয়ে আবার ফিরে আসে সেরেঙ্গেটিতে। ৫০০ কিলোমিটারের এ পথ তারা অতিক্রম করে এপ্রিল থেকে ডিসেম্বর মাসের মধ্যে।

-তাসমিন

ইগুয়াজু জলপ্রপাত

ইগুয়াজু জলপ্রপাত পৃথিবীতে যত নামকরা জলপ্রপাত আছে তার মধ্যে ইগুয়াজু অন্যতম। এটি দক্ষিণ আমেরিকার ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার সীমান্তে অবস্থিত। তবে আর্জেন্টিনাতেই এই জলপ্রপাতের বেশির ভাগ অংশ রয়েছে। মূলত ইগুয়াজু নদী থেকে জলপ্রপাতটির সৃষ্টি হয়েছে। এই জলপ্রপাত ২৭০টি পৃথক জলপ্রপাতের সমষ্টি, যা প্রায় ২.৭ কিলোমিটার (১.১৬৭ মাইল) এলাকাজুড়ে বিস্তৃত। এসব জলপ্রপাত ভূমি থেকে কোনো কোনোটির উচ্চতা প্রায় ৮২ মিটার (২৬৯ ফুট), তবে অধিকাংশই প্রায় ৬৪ মিটার (২১০ ফুট) উচ্চতাবিশিষ্ট। জলপ্রপাতগুলোর মধ্যে বেশি পরিচিত বা বিখ্যাতটির নাম 'দ্য গারগানটা ডেল ডিয়াবেলো' বা শয়তানের বালা। এটি ইউ আকৃতির এবং ১৫০ মিটার প্রশস্ত ও ৭০০ মিটার লম্বা। আর্জেন্টিনার ইগুয়াজু ন্যাশনাল পার্ক এবং ব্রাজিলের ইজুয়াকু ন্যাশনালপার্ক এই জলপ্রপাতের দেখাশোনা করে। এ দুটি পার্কই ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে স্বীকৃত। প্রতি বছর হাজার হাজার দর্শক দূরদূরান্ত থেকে এই জলপ্রপাত দেখতে এখানে ছুটে আসেন।

এই জলপ্রপাত নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে একটা লোককথা প্রচলিত আছে। ঈশ্বর নাকি একবার নেপি নামের এক সুন্দরী নারীর প্রেমে পড়ে বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু অনেক আগেই নেপি মন দিয়ে বসে আছে প্রেমিক টারবোকে। তারা নৌকায় পালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। বিষয়টি জানতে পেরে ঈশ্বর রেগে একটি নদী খনন করেন ও এর সামনে তৈরি করেন এই জলপ্রপাত। এই পথ দিয়ে পালানোর সময় মারা যায় নেপি ও টারবো। ইগুয়াজু জলপ্রপাতটির সৃষ্টি ইগুয়াজু নদী থেকে। পড়েছে ব্রাাজিল ও আর্জেন্টিনার সীমান্তবর্তী এলাকায়। জলপ্রপাতের সিংহভাগই ব্রাজিলে। এর উচ্চতা প্রায় ৬০-৮০ মিটার (২০০-২৬৯ ফুট)। দৈর্ঘ্যে ২ দশমিক ৭ কিলোমিটার (১ দশমিক ৭ মাইল)। এখানে প্রতি সেকেন্ডে প্রায় এক হাজার ৭৫৬ ঘনমিটার পানি ওপর থেকে নিচে পড়ছে। ইগুয়াজু শব্দটার অর্থ এসেছে 'টুপি' শব্দ থেকে। যার অর্থ পানি। নদীটির সামান্য কিছু অংশ পড়েছে প্যারাগুয়ের সীমান্তে। ফলে তিন দেশেরই প্রচুর পর্যটক ভিড় করে। ইউনেসকো ১৯৮৪ সালে আর্জেন্টিনা ও ১৯৮৭ সালে ব্রাজিলের অংশকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। 

Sunday, June 17, 2012

বাঙালির ‘নেতিবাচক’ চিন্তার বলি সুন্দরবন

বাঙালির ‘নেতিবাচক’ চিন্তার বলি সুন্দরবন

by


ঢাকার শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করেছেন এমন মানুষের সংখ্যা গত কয়েকবছরে হুড়হুড়িয়ে বেড়েছে৷ আমার গৃহিনী মাও একদিন আমাকে ফোন করে বলেছিলেন, ‘শুনেছিস, তোর অমুক আত্মীয় শেয়ার বাজারে টাকা খাটিয়ে বেশ লাভ করেছে’৷ আমি বলি, ‘ভালো কথা, তবে তাঁর সতর্ক হওয়া উচিত৷ কারণ শেয়ারবাজার বড়ই নড়বড়ে’৷

ঢাকার শেয়ারবাজার একটি বড় ক্ষেত্র৷ সেখানে অর্থলগ্নির পরিমাণও বেশ বড়৷ গত কয়েকবছরে শেয়ারবাজারে একাধিকবার বড় ধরনের দরপতন হয়েছে৷ অনেকে সর্বশান্ত হয়েছেন৷ সবাই জানে, নির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তি শেয়ার বাজার নিয়ে খেলছে৷ সুযোগবুঝে বাজার থেকে সব পয়সা তুলে নিচ্ছে৷ সরকার তাদের খেলা থামাতে ব্যর্থ৷ তবুও কী শেয়ার বাজারে সাধারনের বিনিয়োগ বন্ধ হচ্ছে?

শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ বন্ধ না হওয়ার পেছনে একটা ইতিবাচক চিন্তা কাজ করে৷ অর্থ খোয়ানো মানুষগুলোর মধ্যে সম্ভবত আশা জাগছে, পরেরবার নিশ্চয়ই লাভ করা যাবে৷ দেখিনা আরেকবার চেষ্টা করে৷ শেয়ারবাজারের ক্ষেত্রে বড়, মুনাফাও বেশি৷ ইতিবাচক চিন্তাও বেশি৷

নাজমুল নয়ন নামের একজন বাংলা ব্লগারের একটি কথা আমার খুব পছন্দ হয়েছে, ‘‘আমারা চিন্তা করি বেশি কথা বলি বেশী কাজ করি কম, সামনে দিয়া শত শত হাতি গেলেও ভয়ে থামাই না, পেছন দিয়ে মশা গেলেই কাম সারছে…”৷

এখানে ‘হাতি’কে আমি শেয়ারবাজারের বড় খেলুড়েদের সঙ্গে তুলনা করতে পারি৷ আর ‘মশা’ হচ্ছে প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্য নির্বাচন প্রক্রিয়া৷ এই প্রক্রিয়া নিয়ে কয়েকবছর আগে বাংলাদেশে সম্ভবত প্রথম আলোচনা শুরু করেন পল্লব মোহাইমেন (যতদূর মনে পড়ে, তিনিই প্রথম সাংবাদিক, যিনি এই প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানের সম্ভাব্যতা তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন)৷

শুরুর দিকে এই প্রক্রিয়ায় সুন্দরবন এবং কক্সবাজার ভালোভাবেই জায়গা করে নিয়েছিল৷ অনলাইন ভোট চলছে, জাতীয় দৈনিকগুলোর প্রযুক্তি পাতা ছাড়িয়ে মূল পাতায় সেই খবর প্রকাশ হতে শুরু করেছে৷ সবমিলিয়ে একটা জমজমাট ভাব৷

কিন্তু চলতি বছরে কিছু মানুষের মনে ‘নেতিবাচক’ চিন্তার উদ্রেক হল৷ দুই টাকা খরচ করে এসএমএস ভোট প্রদানে তারা বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য খুঁজে পেল৷ শুরু হল ‘মশা’ নিধনের প্রক্রিয়া৷ আমাদের স্বজাতির একটি অংশ কামান নিয়ে নেমে পড়ল এই কাজে৷

তাদের নিধন প্রক্রিয়ায় এক বড় সমর্থন ছিল মালদ্বীপ৷ জানা গেল, সেদেশ এই প্রতিযোগিতা থেকে নিজেদের প্রত্যাহারের ঘোষণা করেছে৷ প্রশ্ন উঠল, মালদ্বীপ যেখানে প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্য নির্বাচন প্রক্রিয়া থেকে সরে গেছে, আমরা কেন সেখানে থাকবো? সাদা মনে অনেকেই ভেবেছেন, মালদ্বীপকেই আমাদের অনুসরন করা উচিত৷ কিন্তু কেন অনুসরন করা উচিত বা উচিত নয়, সেটা কী আমরা বিবেচনায় এনেছি?

প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্য নির্বাচন থেকে আমাদের পর্যটন খাতে বড় লাভ হতে পারত৷ বিশ্বের নানা দেশের পর্যটকরা আমাদের সুন্দরবন দেখতে বাংলাদেশ ভ্রমণে উৎসাহী হতে পারতেন৷ বাংলাদেশ যে শুধু বন্যা আর পানির দেশ নয়, সেটাও মানুষ জানত৷

পর্যটনের এই দিকটা বিবেচনা করলে মালদ্বীপের অবস্থা কিন্তু পুরোই ভিন্ন৷ বিশ্বের তাবত পর্যটকের কাছে ইতিমধ্যে একটি প্রতিষ্ঠিত দেশ মালদ্বীপ৷ ভারত মহাসাগরের এই দেশটিতে পর্যটকের ভিড় লেগে থাকে সবসময়৷ যেকারণে সেদেশের মানুষের মাথাপিছু গড় আয় বাংলাদেশি টাকায় চল্লিশ হাজার টাকা!

এক্ষেত্রে আমাদের অবস্থান কী, বছরে কতজন বিদেশি পর্যটক সুন্দরবন দেখতে আসেন? আমাদের দেশে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন আর সমুদ্রতট অবস্থিত, কতজন মানুষ সেটা জানেন? পর্যটন খাত থেকে আমাদের আয়ই বা কেমন? মালদ্বীপের সঙ্গে এসবের তুলনা কী আমাদের চলে?

পাঠক আপনি নিজেই ভাবুন এসব প্রশ্নের উত্তর৷ আমার কাছে এসব প্রশ্নের উত্তরে একটা কথাই বলার আছে, মালদ্বীপের পর্যটন খাতের সঙ্গে আমাদের তুলনা চলে না৷ এক্ষেত্রে সেদেশ আমাদের চেয়ে অনেক উপরে উঠে গেছে৷ তাই, তাদের হয়ত নতুন করে সপ্তাশ্চর্যে নাম লেখানোর প্রয়োজন নেই, কিন্তু আমাদের আছে৷ বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ যদি গড়ে দুই বা দশটাকা খরচ করে সেই প্রয়োজন মেটাতো, তাতে লাভ আমাদেরই হত৷ কিন্তু প্রতিযোগিতার একপর্যায়ে এসে আমরা ‘মশা’ নিধনে আগ্রহী হলাম, ভোট হারাতে শুরু করল সুন্দরবন৷

এই প্রতিযোগিতার আয়োজক সংস্থা নিউ সেভেন ওয়ান্ডার্সের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে আমাদের মধ্যে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল৷ দৈনিক প্রথম আলোয় আনিসুল হক সেটার একটি চমৎকার ব্যাখ্যা দিয়েছেন৷ আমার কাছে সেই ব্যাখ্যা গ্রহণযোগ্য মনে হয়েছে৷ একটি বিষয় এখানে আমাদের বিবেচনা করা উচিত৷ প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্য নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আলোচনা হয়েছে, আমরা দ্বিধাদ্বন্দ্বে থাকলেও আর্জেন্টিনা, ভিয়েতনাম, দক্ষিণ আফ্রিকাসহ অনেক দেশ এই সুযোগ লুফে নিয়েছে৷ এখানে আমাদের দেশের একটা পরোক্ষ ব্র্যান্ডিং হয়েছে৷ এসব দেশের ভোটাররা, পর্যটকরা ঘুরে ফিরে সুন্দরবনের নাম শুনেছেন, সুন্দরবনের বদৌলতে বাংলাদেশ সম্পর্কে জেনেছেন৷ আমরা হেরে গেলেও এই লাভটুকু হয়েছে ঠিকই৷ কিন্তু জিতে গেলে সেটা আরও অনেক দূরে প্রসারিত হত৷ যখন এই প্রতিবেদনটি লিখছি, তখন গুগল নিউজে এই বিষয়ে কয়েক হাজার প্রতিবেদন শোভা পাচ্ছে, সেখানে ঘুরেফিরে আসছে আমাজন (দক্ষিণ আমেরিকা), হ্যালং বে (ভিয়েতনাম), ইগুয়াজু জলপ্রপাত (আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিল), জেজু দ্বীপ (দক্ষিণ কোরিয়া), কোমোডো জাতীয় উদ্যান (ইন্দোনেশিয়া), পুয়ের্তো প্রিন্সেসা আন্ডারগ্রাউন্ড রিভার (ফিলিপাইনস), টেবিল মাউন্টেন (দক্ষিণ আফ্রিকা) এর নাম৷ নেই সুন্দরবন (বাংলাদেশ, ভারত) নামটি৷

২০০৪ সালে ভিয়েতনামের হ্যালং বে ভ্রমণের সুযোগ হয়েছিল আমার৷ এককথায় বলব আমার জীবনের অন্যতম স্মরণীয় ভ্রমণ সেটি৷ সত্যিই হ্যালং বে এই তালিকায় আসার সকল যোগ্যতা রাখে৷ অন্যান্য স্থানগুলোর ছবি দেখেও সন্তুষ্ট আমি৷ বিতর্কিত বা কারো মতে আন্তর্জাতিকভাবে অগ্রহণযোগ্য একটি সংগঠনের নির্বাচিত সাত সৌন্দর্য নিয়ে বিতর্কের কোন সুযোগ নেই৷

বাঙালি হিসেবে আমরা ব্যক্তিস্বার্থকে বড় করে দেখি৷ এতে অপরাধের কিছু নেই৷ কিন্তু জাতি হিসেবে ঐক্যবদ্ধ হওয়াটাও বড় জরুরি৷ ব্যক্তিস্বার্থে ‘হাতি’র ধ্বংসযজ্ঞ থামানো যেমন প্রয়োজন, তেমনি জাতীয় স্বার্থে ‘মশা’কে সমর্থনের ইতিবাচক মনোভাবও দরকার৷ নতুবা আমাদের সামগ্রিক উন্নয়ন কখনোই হবে না৷ বায়ান্ন, একাত্তরের সেই ঐক্যবদ্ধ জাতি কী আমরা আর কখনোই পাবোনা?


Source: n-rb.com/2011/11/12/বাঙালি-সুন্দরবন/

পৃথিবীর প্রাকৃতিক সপ্তাচর্য

পৃথিবীর প্রাকৃতিক সপ্তাচর্য
উজ্জ্বল দত্ত
পৃথিবী জুড়ে প্রাকৃতিক পর্যটন স্থানগুলো নিয়ে প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্য নির্বাচন সম্পন্ন হয়ে গেল। বিশ্বের প্রায় আড়াই হাজার পর্যটন এলাকা নির্বাচনের ভিত্তিতে ধারাবাহিকভাবে এই প্রতিযোগীতায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। তার মধ্য থেকে প্রাপ্ত সমর্থনের সংখ্যার ভিত্তিতে গত ২৮ জুলাই ২০১১ প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্য ফাউন্ডেশন ২৮টি পর্যটন এলাকাকে চুড়ান্তভাবে ঘোষণা করে। সর্বশেষ সাতটি এলাকা সপ্তাশ্চর্য তালিকায় স্থান পায়। এতে প্রথম স্থানে রয়েছে ব্রাজিলের ‘ইগুয়াজু জলপ্রপাত’, দ্বিতীয় স্থানে দক্ষিণ কোরিয়ার স্বায়ত্তশাসিত দ্বীপ প্রদেশ ‘জেজু আইল্যান্ড’,তৃতীয় স্থানে দক্ষিণ আমেরিকার কয়েকটি দেশস্থিত আমাজন বন, চতুর্থ স্থানে ভিয়েতনামের ‘হা লং উপসাগরীয় উপকূল’, পঞ্চম স্থানে রয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার‘টেবল মাউন্টেইন’, ষষ্ঠস্থান লাভ করেছে ফিলিপাইন দ্বীপপুঞ্জের‘পুয়ের্তো-প্রিনচেসা সাবটারেনিয়ান নদী’ এবং সপ্তম স্থান অর্জন করেছে ইন্দোনেশিয়ার ‘কমোডো ড্রাগন আইল্যান্ড’। পুয়ের্তো-প্রিন্সেসা পাতাল নদী জাতীয় উদ্যান পুয়ের্তো-প্রিন্সেসা পাতাল নদী জাতীয় উদ্যান ফিলিপাইনে। পুয়ের্তো প্রিন্সেসা,পালওয়ান ও ফিলিপাইন সিটির কেন্দ্র থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার উত্তরে এর অবস্থান। দ্বীপের উত্তর উপকূলে সেন্ট পল পর্বতে জাতীয় উদ্যান। এই বন উত্তরের সেন্ট পল উপসাগর থেকে পূর্বের ‘বেবুয়ান’ নদী পর্যন্ত বিস্তৃত। পুয়ের্তো প্রিন্সেসা সরকার ১৯৯২ সাল থেকে জাতীয় উদ্যানটির দায়িত্ব নিয়েছেন। পুয়ের্তো প্রিন্সেসা পাতাল নদীটি সেন্ট পল পাতাল নদী নামেও পরিচিত। সাবাং শহর থেকে একটি উঁচু পথ বেয়ে এই পাতাল নদীতে যেতে হয়। ৮.২ কিলোমিটার দীর্ঘ ভ্রমনযোগ্য এই নদীটিও জাতীয় উদ্যানের অন্তর্ভূক্ত। পশ্চিম ফিলিপাইন সাগরের নোনা বাতাস নদী প্রবেশের গুহামুখ বেয়ে নদীতে প্রবাহিত হয়; এই বৈচিত্র্য নদীটিকে স্বাতন্ত্র্য এনে দিয়েছে। পুয়ের্তো-প্রিন্সেসা নদীর উপরিদেশ এবং তলদেশে চুনাপাথরের বেশ কিছু লম্বালম্বি স্তম্ভ (স্ট্যালেগটাইট ও স্ট্যালেগমাইট) রয়েছে। সুদীর্ঘ সময় ধরে জলধারা নিঃসৃত হওয়ার ফলে ভূঅভ্যন্তরস্থ চাপে গলিত চুন বাইরে বেরিয়ে স্তম্ভের আকার ধারন করেছে। নদীর তলদেশে এই প্রক্রিয়া এখনও চলছে। ২০০৭ সাল পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যে, মেক্সিকোর ‘ইউকাতান পেনিনসুলা’ এবং ফিলিপাইনের ‘পুয়ের্তো প্রিন্সেসা’ পাতাল নদী আবিস্কারের কথা জানা যায়। পুয়ের্তো-প্রিন্সেসা পৃথিবীর সর্বদীর্ঘ পাতাল নদী। এশিয়ার অনেক গুরুত্বপূর্ন অরণ্যের জীববৈচিত্র্য এবং পর্বত আর সামুদ্রিক ইকোসিস্টেমের একটি পুর্নাঙ্গ বৈশিষ্ট্য এই পাতাল নদী এবং জাতীয় উদ্যানে বিদ্যমান। গবেষকরা এই বনে প্রায় ৮শ প্রজাতির উদ্ভিদের সন্ধান পেয়েছেন। এদের মধ্যে কমপক্ষে ২৯৫ প্রজাতির বৃক্ষ রয়েছে যারা পরগাছা গোত্রের উদ্ভিদ দ্বারা প্রভাবিত। নিম্নভূমির নাতিশীতোষ্ণ অরণ্যে বৃহৎ বৃক্ষের মধ্যে দাউ,আইপিল,দিটা,এ্যামুগিস এবং আপিটং উল্লেখযোগ্য। উপকূলীয় বনভূমিতে বিটাওগ,পনজামিয়া পিনাটা, ইরিনথিয়া ওয়েরিয়েনটালিস,এ্যালমেসিগা,কামাগং, পানদান এনিবং এবং রাত্তানসহ নাতিশীতোষ্ণ অরণ্যের বৃক্ষগুলোও জন্মে। এই উদ্যানে অনেক প্রজাতির পাখির বিচরণ দেখা যায়। পালাওয়ান সীমানায় ২৫২ প্রজাতির পাখির বাস । বনে এরা ছাড়াও ১৬৫ প্রজাতির পাখি বাস করে। পার্কের ৬৭ শতাংশ পাখিই পালাওয়ান বনের। সংক্রামক রোগবাহী পাখিদের ১৫টি প্রজাতিই পালাওয়ানের। নীল গলা টিয়া, শক্ত,খাড়া পালকওয়ালা টেবন পাখি,পাহাড়ী ময়না,পালাওয়ানী ধনেশ পাখি ও শ্বেত বক্ষের সামুদ্রিক ঈগল এই বনের উল্লেখযোগ্য পাখি। প্রায় ৩০ প্রজাতির স্তন্যপায়ীর বসবাস লক্ষ্য করা যায়। জোয়ারের সময় বনের আকাশে এবং সৈকতে বাচ্চাদের খাবার সংগ্রহের জন্য লম্বা লেজওয়ালা ম্যাকাকা দেখা যায়। পাখি গোত্রে এরাই সর্বোচ্চ শ্রেণীর স্তন্যপায়ী। অন্য স্তন্যপায়ীর মধ্যে গোঁফওয়ালা শুকর,পশমি বিড়াল,পালওয়ানী গন্ধব্যাজার এবং পালওয়ানী সজারু উল্লেখযোগ্য। এ পর্যন্ত ১৯ প্রজাতির সরীসৃপ আবিস্কৃত হয়েছে,তন্মধ্যে ৮টি প্রজাতি রোগবাহী। মাংসাশী শিকারী মধ্যে ডোরাকাটা পাইথন(অজগর),বহুরূপী গিরগিটি এবং সবুজ রঙা টিকটিকির দেখা পাওয়া যায়। উভচরের মধ্যে এই অঞ্চলে ১০টি প্রজাতির বিচরণ চোখে পড়ে। ফিলিপাইন উডল্যান্ড ব্যাঙ তুলনামুলক এই বনের সবচেয়ে দ্রুতগামী প্রাণী। বারবোরশুলা নামের প্রাণীটি একমাত্র পালওয়ান অঞ্চলে দেখা যায়। তাছাড়া গুহাগুলোতে ৯ প্রজাতির বাঁদুর এবং ২ প্রজাতির দ্রুত ও বিষাক্ত মাকড়সা বাস করে। পার্কের উপকূলীয় অঞ্চলে সমুদ্রগাভী নামে পরিচিত সীল এবং হক্সবিল কচ্ছপের বিচরণ দেখা যায়।
উইকিপিডিয়া অবলম্বনে

১০ ই জুন ২০১২

Source:
www.dainikazadi.org

একাধিক ভাষা মস্তিষ্কের শক্তি বাড়ায়

একাধিক ভাষা মস্তিষ্কের শক্তি বাড়ায়

ভাব প্রকাশের জন্য ভাষা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আর মাতৃভাষায় ভাব প্রকাশ করতে পারার মতো আনন্দ ও গর্ব অন্য ভাষায় নেই। কিন্তু বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে মাতৃভাষার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক ভাষার দক্ষতা অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। তাতে অবশ্য দুই দিক থেকেই লাভ যোগ হতে পারে। কর্মপরিধি বাড়ার পাশাপাশি মানুষের মস্তিষ্কের শক্তিও নাকি বেড়ে যায়- বিজ্ঞানীরা এমন কথাই শুনিয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির একদল বিজ্ঞানী এ নিয়ে গবেষণা করেন। সম্প্রতি ওই গবেষণা শেষে তাঁরা জানিয়েছেন, মাতৃভাষার পাশাপাশি অন্য একটি ভাষা শিক্ষার মাধ্যমে মানুষের মস্তিষ্কের শক্তি বেড়ে যেতে পারে। তাঁদের মতে, জোড়া ভাষার দক্ষতা মস্তিষ্কের প্রশিক্ষণের মতো। এটি এমন এক মানসিক শক্তি, যা মনকে প্রফুল্ল রাখে।

গবেষণার ফল উল্লেখ করে বিজ্ঞানীরা জানান, প্রাঞ্জলভাবে দু'টি ভাষা বললে মস্তিষ্কে এর প্রভাব পড়ে। এতে শব্দের প্রতি ব্যক্তির স্নায়ুবিক ব্যবস্থায় সাড়া দেওয়ার প্রক্রিয়া পরিবর্তন হয়।

গবেষণার জন্য বিজ্ঞানীরা স্বেচ্ছাসেবী ৪৮ জন স্বাস্থ্যবান শিক্ষার্থীর মস্তিষ্কের সাড়া প্রদান প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করেন। এর মধ্যে ২৩ জন ছিলেন দু'টি ভাষায় কথা বলায় দক্ষ। বৈদ্যুতিক প্রবাহ নির্ণয় করতে সক্ষম একটি ব্যবস্থার মাধ্যমে বিভিন্ন শব্দের প্রতি তাদের মস্তিষ্কের সাড়া প্রদান প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করা হয়। এতে দেখা যায়, শান্ত পরিস্থিতিতে সবার মস্তিষ্ক একই ধরনের সাড়া দেয়। কিন্তু কোলাহলপূর্ণ পরিবেশে জোড়া ভাষায় দক্ষ শিক্ষার্থীরা শব্দের প্রতি ভালোভাবে সাড়া দিতে পেরেছেন। সূত্র : বিবিসি অনলাইন।

নিউটনের ধাঁধার উত্তর মিললো ৩৫০ বছর পর

নিউটনের ধাঁধার উত্তর মিললো ৩৫০ বছর পর

প্রখ্যাত ইংরেজ পদার্থবিজ্ঞানী, গণিতবিদ, জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও অ্যালকেমিস্ট স্যার আইজ্যাক নিউটন (১৬৪৩-১৭২৭) প্রায় ৩৫০ বছর আগে বস্তুর গতিসম্পর্কিত দুটি প্রশ্ন রেখেছিলেন। সেই থেকে প্রশ্ন দুটি বিজ্ঞানীদের ধাঁধায় রেখেছিল। কিন্তু এবার সেই জটিল ধাঁধার ঘোর কাটল! আর এ কাজটি করল মাত্র ১৬ বছর বয়সী ভারতীয় কিশোর শৌর্য রায়। বাবার চাকরি সূত্রে বেশ কয়েক বছর ধরে জার্মানিতে বাস করছে তারা।

বিশ্ববাসীর কাছে নিউটনের করা প্রশ্ন দুটি প্রায় ৩৫০ বছর ধরে দুর্বোধ্যই ছিল। নিউটনের প্রশ্ন ছিল পৃথিবীর ওপর থেকে কোনো ঢিল যদি সামনের দিকে পৃথিবীর সঙ্গে সমান্তরালে ছোড়া হয়, কিছুক্ষণ পর ঢিলটি অভিকর্ষের টানে মাটিতে নেমে আসে। তবে ঢিলটির ওপর যে শক্তি (বল) প্রয়োগ করা হয়েছে তার ওপরে অভিকর্ষের টান, দুটি মিলিয়ে একটি মিশ্র বল (লব্ধি) তৈরি হয়। যার প্রভাবে কিছুটা বাঁকা পথে মাটিতে এসে পড়ে বস্তুটি। আগের থেকে আরো জোরে ঢিল ছুড়লে সে আগের থেকে আরো দূরে গিয়ে মাটিতে পড়ে। কিন্তু ঠিক কোন গতিতে ওই ঢিলটা ছোঁড়া হলে সে পৃথিবীতে গোলভাবে পাক খেয়ে একদম ঠিক সেই জায়গায় এসেই মাটিতে পড়বে, ঠিক যেখান থেকে তাকে ছোঁড়া হয়েছিল এবং মাটিতে ধাক্কা খেয়েই বা সে কোন দিকে লাফাবে?

এ প্রশ্নের উত্তর সন্ধানে অনেক ঘাম ঝরিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। কিন্তু সঠিক সমাধান বের করতে পারেননি। কয়েক বছর আগে উন্নত কম্পিউটারের সাহায্যে এ প্রশ্নের উত্তর পাওয়া গেলেও সেটিও ছিল বেশ জটিল আর গোলমেলে। কিন্তু এবার খুব সহজে নিজের হাতে অঙ্ক কষে নিউটনের প্রশ্নের উত্তর বের করে বিশ্বের বিজ্ঞানীদের অবাক করে দিয়েছে স্কুলছাত্র শৌর্য। শুধু তাই নয়, তার কষা অঙ্কের পদ্ধতিতে কোনো বল ছুড়লে সহজেই হিসাব করা যাবে বলটির গতিপথও।

জার্মানির ড্রেসডেন শহরে বাস করে শৌর্য। পড়ছে ড্রেসডেনের একটি স্কুলে। চার বছর আগে পরিবারের সঙ্গে কলকাতা থেকে জার্মানিতে গিয়েছে সে। শৌর্য গণমাধ্যমকে বলেছে, জার্মান ভাষা জানা না থাকায় প্রথমে তার বেশ অসুবিধে হয়েছে। তবে এখন সে অনায়াসে জার্মান ভাষা বলতে পারে। এক দিন স্কুল থেকে ড্রেসডেন বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল শৌর্যদের। সেখানে নিউটনের বিষয়ে বলতে গিয়ে এক অধ্যাপক নাকি শৌর্যদের কাছে দাবি করেন, কোনো মানুষের পক্ষে নিউটনের ওই দুটি প্রশ্নের উত্তর বের করা সম্ভব নয়। কিন্তু অধ্যাপকের এ দাবি মেনে নিতে পারেনি শৌর্য। তাই সেই প্রশ্ন দুটির উত্তর বের করতে অঙ্ক কষতে লেগে যায়।

শৌর্য গণমাধ্যমকে বলেছে, ‘আমার মনে প্রশ্ন জেগেছিল, কেন কেউ নিউটনের সেই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে না? সব কিছুরই তো উত্তর খুঁজে পাওয়া সম্ভব।'

শৌর্যের এ সাফল্যের খবরে বিশ্বের গণিত ও পদার্থবিজ্ঞানের অঙ্গনে বেশ হৈচৈ শুরু হয়েছে। তবে নিজেকে এতটা কৃতিত্ব দিতে নারাজ শৌর্য। তার মতে, সে প্রতিভাবান নয়। বরং স্কুলে যদি সে আরো একটু ভালো করে ফুটবল খেলতে পারত, তা হলে অনেক বেশি খুশি হতো। শৌর্যের মেধাগুণে মুগ্ধ হয়ে স্কুলের শিক্ষকরা তাকে সমবয়সীদের চেয়ে দুই ক্লাস ওপরে ভর্তি করিয়েছেন। শিগগিরই পরীক্ষা শেষে কলেজে ভর্তি হবে শৌর্য। ্য

ইন্টারনেট

অদ্ভূত গিরিখাত দ্য গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন

অদ্ভূত গিরিখাত দ্য গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন

এম এস শহিদ : পাহাড়ের গায়ের ফাটলকে গিরিখাত বলা হয়। তবে এ ফাটল ছোটখাটো নয়, বিশাল বিশাল ফাটল। এতোই বিশাল যে, কিছু কিছু জায়গায় এসব ফাটল এক মাইল পর্যন্ত চওড়া হয়ে থাকে। তবে এসব ফাটল কিন্তু একদিনে সৃষ্টি হয়নি। কোটি কোটি বৎসর ধরে ধীরে ধীরে তৈরি হয় এসব ফাটল। যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্যে অবস্থিত এমনই একটি অদ্ভূত গিরিখাতের না দ্য গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন। ভূতত্ত্ববিদদের মতে, এটি প্রায় ১ কোটি ৭০ লাখ বছরের পুরনো। গ্র্যান্ড ক্যারিয়ন লম্বায় প্রায় ৪৪৬ কিলোমিটার এবং কিছু কিছু জায়গায় এ গিরিখাত প্রায় ১ কিলোমিটার পর্যন্ত চওড়া। সবচেয়ে অবাক ব্যাপার হচ্ছে, এ গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের গভীরতা প্রায় ৬০০০ ফুট বা ১৮০০ মিটার। বিশাল এ গিরিখাতের মধ্যদিয়ে কলোরাডো নামে একটি নদী বয়ে গেছে। গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের বেশিরভাগই ‘গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন ন্যাশনাল পার্ক' এর মধ্যে পড়েছে। আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট থিওডোর রুজভেন্ট এ গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের উন্নয়ন ও সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে গেছেন। পৃথিবীর ভৌগলিক পরিবর্তনের কারণেই এ সুবিশাল গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন তৈরি হয়েছে। তবে একদিনে কিন্তু গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন তৈরি হয়নি। এর বর্তমান অবস্থায় আসতে বহু বছর লেগে গেছে। তবে কতো বছর আগে গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন তৈরি হতে শুরু করেছিলো সে সম্পর্কে কিন্তু ভূতত্ত্ববিদরা এখনো একমত হতে পারেননি। তবে কিছু কিছু তথ্য ও প্রমাণের ভিত্তিতে ধারণা করা হয় আজ থেকে প্রায় ১৭ মিলিয়ন বছর আগে সৃষ্টি হয়েছিলো গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন।

শুরুতে গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের চেহারাও বর্তমানের মতো ছিল না এবং সেসময় গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের মধ্যে দিয়ে কলোরাডো নদী প্রবাহিত হতো। আর তখন এ নদীর অকেগুলো শাখা প্রশাখাও ছিলো। ধীরে ধীরে এসব নদীর তীরে পলি জমল। সেই পলিমাটি ক্রমে ক্রমে কঠিন হয়ে পরিণত হলো পাথরে। আর এসব পাথরই এক সময় নদীর গতিপথ পাল্টে দিলো। আবার এসব পাথর নদীর স্রোতেই ক্ষয় হয়ে নতুন নদীপথ তৈরি হচ্ছে। পৃথিবীর গিরিখাতগুলোর মধ্যে গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন সবচেয়ে বিখ্যাত। তবে এটি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় গিরিখাত কিংবা গভীর গিরিখাতও নয়। নেপালের ‘কালি গন্দকি জর্জ' নামক গিরিখাতটি আরো গভীর। আর অস্ট্রেলিয়ার ‘ক্যাপারটি ভ্যালি' গিরিখাতটি গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের চেয়েও প্রায় এক কিলোমিটার লম্বা ও চওড়া। তবে গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন গিরিখাতটি বিখ্যাত হওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। এর বিশালত্ব, নান্দনিক দৃশ্য, দুর্গম অঞ্চল আর বিচিত্র রংয়ের পাথরে গড়া পাহাড়ের সমাবেশেই ভ্রমণ পিপাসু মানুষকে কাছে টেনে নেয়। গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের বড় বড় পাথরগুলো সুন্দরভাবে সাজানো, যা দেখলে যে কেউই মুগ্ধ হতে বাধ্য। গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের পাথরগুলো স্তরে স্তরে সজ্জিত। একেকটা স্তরকে বলা হয় প্লেট। কলোরাডো নদী থেকে উৎপন্ন বলে এখানকার প্লেটগুলোকে কলোরাডো প্লেট বলা হয়। লাখ লাখ বছর সময় লেগেছে এ প্লেটগুলো তৈরি হতে। বেশিরভাগ ভূতত্ত্ববিদ মনে করেন প্রায় ১৭ মিলিয়ন বছর আগে এসব প্লেট তৈরি হয়। তবে এগুলো আরো আগের বলে অনেকেই মনে করেন। তাদের মতে, পাথরের এসব প্লেট তৈরি হতে প্রায় ৪০ মিলিয়ন বা ৪ কোটি বছর লেগেছিলো। গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের সবচেয়ে নিচের স্তর সৃষ্টি হয় প্রায় ৬ কোটি বছর আগে। এ স্তর শীর্ষ থেকে প্রায় ৫ থেকে ১০ হাজার ফুট নিচে অবস্থিত। গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের পাথরের স্তরগুলোর মধ্যে নিচের স্তরটি সবার আগে তৈরি হয়েছিলো। এরপর এ স্তর ধীরে ধীরে খাড়া ওপরে উঠে যেতে থাকে। তৈরি করতে থাকে পাথরের নতুন নতুন স্তর। আবার কলোরাডো ও তার শাখা-প্রশাখাগুলো ছিল ভীষণ খরস্রোতা, এদের স্রোতের কারণে পাথর ক্ষয় হয়ে নদীর নতুন গতিপথ সৃষ্টি হতে লাগলো এবং সেইসাথে ক্ষয়ে যাওয়া সেসব পাথর থেকে নতুন নতুন স্তরও সৃষ্টি হতে লাগলো। এরপর বরফের যুগ। বরফ যুগের পরে বরফ গলে নদীতে পানির পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার সাথে সাথে স্রোতও বেড়ে গেলো। এ স্রোতের কারণে পাথরের স্তর আরো দ্রুতগতিতে ক্ষয়ে আরো গভীর হয়ে যেতে লাগলো। অতঃপর প্রায় ৫৩ লাখ বছর আগে কলোরাডো নদীর একেবারে নিচের স্তর তৈরি হয়। ভিত্তি তৈরি হয়ে যাওয়ার ফলে কলোরাডোর স্রোত এর চারপাশের পাথরগুলোকে আরো বেশি ক্ষয় করতে থাকে।

এভাবে ক্ষয় হতে হতে এ নদী আজকের অবস্থায় এসে পৌঁছেছে। গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের কলোরাডো নদীর চারপাশের দেয়ালে পাথরের যে স্তরগুলো দেখতে পাওয়া যায় সেগুলোও একরমক ক্ষয় হয়েই সৃষ্টি হয়েছে। আর বর্তামন কলোরাডো নদীর যে গভীরতা সেটিও প্রায় ১২ লাখ বছর আগে হয়েছিলো। এরপর ৩০ থেকে ১ লাখ বছর আগের সময়ের মধ্যে পৃথিবীর আগ্নেয়গিরিগুলোতে ঘন ঘন অগ্ন্যুৎপাত হতো এবং এর ফলে গ্র্যান্ড ক্যানিয়নে ঘটলো আরো পরিবর্তন। আগ্নেয়গিরির লাভা আর ছাই এসে জমা হতে লাগলো কলোরাডো নদীর তলদেশে আর এর আশপাশের এলাকায়। বছরের পর বছর এসব ছাই আর লাভা জমা হয়ে সেগুলো ক্রমে ক্রমে জমে রূপান্তরিত হয় পাথরে। এসব লাভা আর ছাই দিয়ে তৈরি হয় গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের সবচেয়ে নতুন পাথরের স্তরগুলো। সমগ্র গ্রা্যন্ড ক্যানিয়ানকে প্রধানত ২টি অঞ্চলে ভাগ করা হয়েছে। নর্থ রিম এবং সাউথ রিম নামে এ ২টি অঞ্চলের ভৌগলিক অবস্থার মধ্যে বেশ পার্থক্য থাকায় এদের মধ্যকার আবহাওয়া ও জলবায়ুর মধ্যে বেশ তারতম্য রয়েছে। সাউথ রিমের চেয়ে নর্থ রিমের স্বাভাবিক তাপমাত্রা কম। কারণ নর্থ রিমের পাহাড়গুলো সাউথ রিমের পাহাড়গুলোর চেয়ে প্রায় ১ হাজার ফুট বেশি উঁচু। আর নর্থ রিমের পাহাড়গুলোর উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে গড়ে প্রায় ৮ হাজার ফুট। কলোরাডো নদীটি উত্তর থেকে দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয়েছে। নদী তার উৎপত্তিস্থল থেকে যতো দূরে যাবে এর স্রোতও ততো হ্রাস পেতে থাকবে। তার মানে দাঁড়াল কলোরাডো নদীর উৎপত্তিস্থল উত্তর দিকে হওয়ায় সেখানে নদীর স্রোতও বেশি। আর স্রোত বেশি হওয়ায় সেখানে নদী আরো বেশি পরিমাণ পাথর ক্ষয় করতে পারে। ফলে আরো বেশি পরিমাণে পলি নদীতে জমে। আর সে কারণেই নর্থ রিমের পাহাড়গুলো সাউথ রিমের পাহাড়গুলোর চেয়ে বেশি উঁচু। তবে গ্রীষ্মকালে ২টি অঞ্চল্পেই প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। তবে গ্র্যান্ড ক্যানিয়নে যেতে হলে গ্রীষ্মকালে যাওয়াই ভালো। কেননা শীতকালে সেখানে প্রচুর বরফ পড়ার কারণে নর্থ রিমের রাস্তাঘাট বন্ধ হয়ে যায়। আর নর্থ রিমে যেতে না পারলে গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের আসল সৌন্দর্যটাই উপভোগ করা যাবে না। শুনে অবাক মনে হলেও সত্যি হলো, দুর্গম পাথরের এ গিরিখাতেও মানুষ বাস করে। যেমন পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধে প্রচন্ড ঠান্ডা আর বরফ থাকা সত্ত্বেও সেখানে এক্সিমোরা বাস করে, তেমন গ্র্যান্ড ক্যানিয়নেও বাস করে এক বিশেষ জাতি। তাদের নাম হচ্ছে ‘পুয়েব্লো'।

এরাই গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের আদি অধিবাসী। ইউরোপীয়ানরা আমেরিকায় পৌঁছার অনেক আগে থেকে তারা এ দুর্গম গিরিখাত অঞ্চলে বসবাস করে আসছে। পুয়েব্লোরাই প্রথম এ অঞ্চলের নাম দেয় অংতুপকা। এটা পুয়েব্লোদের নিজস্ব ভাষার নাম। গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন পুয়েব্লোদের কাছে পবিত্র জায়গা বা তীর্থস্থান নামে পরিচিত। পুয়েব্লো ছাড়াও এখানে ইয়ুমান, হাভাসপাই, ওয়ালাপাই জাতি বাস করে। এদের সবাইকে প্রাচীন ‘কোহোনিনা' জাতির বংশধর বলে মনে করা হয়। ৫০০ থেকে ১২০০ খৃষ্টাব্দ সময়ের মধ্যে গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের পশ্চিম অংশে কোহোনিনারা বাস করতো। এছাড়া ৫০০-১৪৫০ খৃষ্টাব্দের মধ্য সময়ে ‘সিনাগুয়া' নামের একটি জাতি গ্র্যান্ড ক্যানিয়নে বাস করতো। কিন্তু গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন থেকে তারা হারিয়ে গেছে। এদের কোনো বংশধরই আর জীবিত নেই।



নতুন সপ্তাশ্চর্য

নতুন সপ্তাশ্চর্য

সুইজারল্যান্ড ভিত্তিক সংগঠন 'New Seven Wonders Foundation' ২০০৭ সালে ২২০টি দেশের ৪৫০টি স্থানের প্রাথমিক তালিকা প্রণয়ন করে। ইন্টারনেটে ভোটিং-এর মাধ্যমে ২০০৯ সালের ৭ জুলাই শীর্ষ ৭৭টি স্থানের তালিকা প্রকাশ করে। এখান থেকে বাছাই করে ২৮টি চূড়ান্ত প্রতিযোগী স্থানের নাম প্রকাশ করে ২০০৯ সালের ২১ জুলাই। ২৮টি স্থান নিয়ে শুরু হয় চূড়ান্ত ভোটিং কার্যক্রম। প্রথমে অবশ্য ই-মেইলের মাধ্যমে দেয়া গেলেও পরে ফোন এবং এসএমএস-এর মাধ্যমে ভোট দেয়ার সুযোগ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। এ কার্যক্রম চলে ১১.১১.২০১১ পর্যন্ত। এরপর প্রাথমিকভাবে সপ্তাশ্চর্যের তালিকা ঘোষণা করা হয়। সপ্তাশ্চর্য পরিচিতি সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো :

আমাজন (দক্ষিণ আমেরিকা) : প্রশস্ততার দিক দিয়ে পৃথিবীর বৃহত্তম নদী হচ্ছে আমাজন নদী। এটা আমাজন রেইন ফরেস্ট। আমাজোনিয়া, আমাজন জঙ্গল বা আমাজন বেসিন নামে সর্বাধিক পরিচিত। দক্ষিণ আমেরিকার ৯টি (বলিভিয়া, ব্রাজিল, কলম্বিয়া, ইকুয়েডর, ফ্রেন্স গায়ানা, গায়ানা, পেরু, সুরিনাম ও ভেনেজুয়েলা) দেশজুড়ে রয়েছে আমাজন নদী এবং বনের অবস্থান। এটা প্রায় ৫৫ লাখ বর্গ কিলোমিটার জায়গা জুড়ে বিস্তৃত। আমাজন নদীর পানি প্রবাহ পৃথিবীর বৃহৎ ১০টি নদীর পানি প্রবাহের চেয়ে বেশি। পৃথিবীর মোট পানি প্রবাহের প্রায় ১৫ শতাংশ প্রবাহিত হয় এ নদী দিয়ে। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, এত বৃহৎ নদী হওয়া সত্ত্বেও এর উপর কোন ব্রিজ নেই।

হালং বে (ভিয়েতনাম) : ১৯৯৪ সালে ইউনেস্কো কর্তৃক বিশ্ব ঐতিহ্যের অন্তর্ভুক্ত করা হয় ভিয়েতনামের কুয়াংনিহ প্রদেশের উপসাগর হালং বে। এর আয়তন ১৫৫৩ বর্গ কিলোমিটার। এতে প্রায় ২০০০টি ক্ষুদ্র দ্বীপ রয়েছে যার অধিকাংশই পাথরের। এর উপকূল রেখা দৈর্ঘ্যে প্রায় ১২০ কিলোমিটার। হালং বে উপসাগরে প্রায় ২০০ প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়। এর ভেতরে পাথরের তৈরি দ্বীপগুলোর মাঝে রয়েছে অসংখ্য হ্রদ। ডাউ বি (Dau Be) এ রকমই একটি দ্বীপ যার মধ্যে রয়েছে ৬টি হ্রদ।

টেবল মাউন্টেন (দক্ষিণ আফ্রিকা) : টেবল মাউন্ট হচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউনে অবস্থিত একটি পর্বত, যা কেপটাউনের সবচেয়ে আকর্ষণীয় একটি স্তম্ভ। এই স্তম্ভ আকৃতির পর্বতের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এখানে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে উদ্ভিদরাজির সমাহার। প্রায় ১৪৭০ প্রজাতির উদ্ভিদ পাওয়া যায় এই পর্বতে। রক হাইর‌্যাক্স (Rock Hyrax) নামের ইঁদুর সদৃশ (আকারে ইঁদুরের চেয়ে বড়) এক প্রকার জন্তু এ পর্বতের প্রধান প্রাণী যারা পাথরের কোটরে বাস করে। টেবল মাউন্টেনের সর্বোচ্চ চূড়া সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১০৮৬ মিটার উঁচুতে।

ইগুয়াজু ফলস (আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিল) :

পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্তম জলপ্রপাত হচ্ছে ইগুয়াজু ফলস। ফুটবল বিশ্বের দুই পরাশক্তি আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলকে একই সুতায় গেঁথেছে এই ইগুয়াজু ফলস। ৬০-৮০ মিটার উচ্চতা সম্পন্ন জলপ্রপাতটি ব্রাজিল এবং আর্জেন্টিনা সিমান্তে অবস্থিত। ইগুয়াজু ফলস-এর সর্বোচ্চ উঁচু স্থানটির নাম ‘ডেভিল'স থ্রোট'। জলপ্রপাতটির পানি প্রবাহের মূল উৎস হচ্ছে ইগুয়াজু নদী।

জেজু আইল্যান্ড (দক্ষিণ কোরিয়া) :

জেজু দ্বীপ দক্ষিণ কোরিয়ার উপকূল থেকে ১৩০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত। দেখতে অনেকটা আগ্নেয়গিরির মতো হওয়ায় অনেকে একে আগ্নেয়গিরি সদৃশ দ্বীপও বলে। এটা দক্ষিণ কোরিয়ার সর্ববৃহৎ দ্বীপ। জেজু দ্বীরে উপরিভাগের আয়তন প্রায় ১৮৪৬ বর্গ কিলোমিটার। হাল্লাসান পর্বত হচ্ছে এর সর্বোচ্চ বিন্দু যার উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৯৫০ মিটার।

কোমোডো ন্যাশনাল পার্ক (ইন্দোনেশিয়া) :

কোমোডো, রাইকান এবং প্যাডার দ্বীপ নিয়ে গঠিত ইন্দোনেশিয়ার কোমোডো ন্যাশনাল পার্ক। তবে এই তিনটি দ্বীপ ছাড়াও এর সাথে ছোট ছোট আরো অনেকগুলো দ্বীপ রয়েছে। ন্যাশনাল পার্কটির আয়তন ১৮১৭ বর্গ কিলোমিটার। মূলত কোমোডো ড্রাগন (এক প্রকার গুইসাপ)দের রক্ষা করার জন্যই কোমোডো ন্যাশনাল পার্কটি তৈরি করা হয়েছিল। বর্তমানে এটি ৪২ প্রজাতির প্রাণীর অভয়ারণ্য। ১৯৯১ সালে ইউনেস্কো কর্তৃক কোমোডো ন্যাশনাল পার্কটি বিশ্ব ঐহিত্যের (World Heritage site) অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

পুয়েতো প্রিন্সিয়া আন্ডারগ্রাউন্ড রিভার (ফিলিপাইন) :

ফিলিপাইনের পুয়েতো প্রিন্সিয়া শহর থেকে ৫০ কিলোমিটার উত্তরে ‘পুয়ের্তো প্রিন্সিয়া আন্ডারগ্রাউন্ড রিভার' অবস্থিত। ৮.২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এ নদীটি একটি পাথরের পর্বতের নিচে দিয়ে প্রবাহিত হয়ে একটি গুহা অতিক্রম করে দক্ষিণ চীন সাগরে পতিত হয়েছে। এটিই পৃথিবীর দীর্ঘতম আন্ডারগ্রাউন্ড রিভার। নদীটি গুহার মধ্য দিয়ে চলার সময় বিভিন্ন ধরনের ভূমিরূপের সৃষ্টি করেছে। অনেক পর্যটক এখানে ভ্রমণ করে। ১৯৯২ সালে পুয়ের্তো প্রিন্সিয়া আন্ডারগ্রাউন্ড রিভারটি ন্যাশনাল পার্কের আওতায় নিয়ে আসা হয়।

-মহিউদ্দিন নোমান

Thursday, April 12, 2012

বাংলাদেশে ভূমিকম্প: ঝুঁকি, প্রস্তুতি ও করণীয়

নগর পরিকল্পনাবিদ ও সহকারী অধ্যাপক, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ, জ্যাকসনভিল স্টেট ইউনিভার্সিটি, যুক্তরাষ্ট্র।

বাংলাদেশে গতকাল তিন দফা মৃদু ভূমিকম্প হয়েছে। এছাড়া ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রায় ৮ দশমিক ৬ মাত্রার প্রবল ভূমিকম্পের পর সুনামি সতর্কতা জারির পর তা প্রত্যাহার করা হয়েছে। প্রথমে সুনামি (Tsunami) সম্পর্কে একটু বলে নেই। সমুদ্র বা হ্রদের কোন বিস্তৃত এলাকার পানি সরে যাওয়ার ফলে যে ঢেউয়ের সৃষ্টি হয় তাকেই সুনামি বলে।
ভূমিকম্প (মূলত সমুদ্রের তলদেশে) সুনামি সৃষ্টি হওয়ার একটি প্রধান কারণ। ঘূর্ণিঝড়ের ফলে উপকূলীয় এলাকায় যে জলোচ্ছ্বাস হয় তার চেয়ে সুনামি বেশ ভিন্ন। আমরা জানি জলোচ্ছ্বাসের সময় আমাদের উপকূলে ঢেউয়ের উচ্চতা অনেক বেশি হয়, কারণ আমাদের উপকূলের মহীসোপান (continental shelf) বেশ অগভীর। কিন্তু সুনামির ক্ষেত্রে এটা আবার ‘শাপে বর’ অবস্থা অর্থাৎ এর প্রভাব বিপরীত। কারণ, সুনামি মূলত তরঙ্গের গতির ওপর নির্ভরশীল।
বাংলাদেশের উপকূলের মহীসোপান শুধু অগভীরই নয়, বহুদূর পর্যন্ত বিস্তৃতও (প্রায় ১০০ কিমি থেকে ২৫০ কিমি পর্যন্ত)। সুনামির তরঙ্গ উপকূলে যে গতি নিয়ে আসে স্বল্প গভীরতার জন্য ঘর্ষণপ্রাপ্ত হয়ে তা বেশী দূর অগ্রসর হওয়ার কথা নয়। আবার বিস্তৃত মহীসোপানের শেষ প্রান্তে আসতে আসতে এর গতিও অনেক কমে যাওয়ার সম্ভাবনা।
চিত্র-কঃ এপ্রিল ১১, ২০১২ ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রায় সৃষ্ট ৮.৬ মাত্রার ভূমিকম্পের এপিসেন্টার ও ফল্টলাইনের অবস্থান (সূত্রঃ ইউএসজিএস)
চিত্র-কঃ এপ্রিল ১১, ২০১২ ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রায় সৃষ্ট ৮.৬ মাত্রার ভূমিকম্পের এপিসেন্টার ও ফল্টলাইনের অবস্থান (সূত্রঃ ইউএসজিএস)

এছাড়া সুনামির ক্ষেত্রে যে স্থানে ভূমিকম্প হয়েছে সেখানে ফল্ট (চ্যুতি) লাইনের প্রেক্ষিতে ভৌগলিক অবস্থানেরও একটা বিশাল ভূমিকা রয়েছে। সাধারণত ফল্টলাইন যে বরাবর থাকে কম্পন তার বিপরীত দিকে বৃত্তাকারে ছড়িয়ে পড়ে। ২০০৪ সালের ডিসেম্বরে যে ভয়াবহ সুনামি হয়েছিলো তার ভূ-কম্পনের ফল্টলাইন উত্তর-দক্ষিণ বরারর থাকায় এর কম্পন ছড়িয়ে পড়েছিল এপিসেন্টার থেকে লম্ব অর্থাৎ পশ্চিম বরাবর। ফলে পশ্চিমে অবস্থিত শ্রীলংকাসহ অনেক দূরে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশকে আঘাত হানলেও বাংলাদেশ উত্তরে ফল্টলাইন বরাবর অবস্থান করায় এবং মহিসোপান অনেক দূর বিস্তৃত থাকায় আঘাত তেমন টের পাওয়া যায় নি। গতকাল (১১ই এপ্রিল) সুমাত্রায় যে ভূমিকম্প হয়েছে সেটাও ঠিক কাছাকাছি জায়গায় এবং একই ফল্টলাইন বরাবর (চিত্র-ক)। এ ক্ষেত্রে সুনামি সৃষ্টি হলেও তা থেকে বাংলাদেশের ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা ছিলো কম। কাজেই সুনামির ক্ষেত্রে আতংকিত না হয়ে বা প্যানিক না ছড়িয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে তারপর সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত।


সুনামির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জন্য আতংকজনক তেমন কিছু না থাকলেও ঘনবসতিপূর্ণ এদেশে বড় কোনো ভূমিকম্প যে বিশাল দুর্যোগ বয়ে নিয়ে আসবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। শিরোনামে প্রস্তুতি ও করণীয় বলতে এখানে মূলত ভূমিকম্পে ব্যক্তিগত প্রস্তুতির কথাই তুলে ধরা হয়েছে। প্রচারণা, উদ্ধার ও পুনর্বাসন কাজে রাষ্ট্র এবং নগর কর্তৃপক্ষগুলোর প্রস্তুতি ও ভূমিকাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভূমিকম্পের সাথে অন্য প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলির মধ্যে একটি বড় পার্থক্য হচ্ছে এটি খুব কম সময়ে কোনো পূর্বাভাস ছাড়াই সম্পন্ন হয়। ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দেবার মতো কোনো উপযুক্ত পন্থা বা প্রযুক্তি এখনও আবিষ্কৃত হয় নি। ভূমিকম্প বিষয়ে তাই সবার ব্যক্তিগত পূর্বপ্রস্তুতি ও এ সময়ে করণীয় সম্পর্কে ধারণা থাকা জরুরী।
ভূমিকম্প ঝুঁকি
নিজ এলাকার ভূমিকম্প ঝুঁকি সম্পর্কে ধারণা রাখাও প্রস্তুতির একটা অংশ। ভূমিকম্প ঝুঁকি অনুযায়ী ভূ-তাত্ত্বিকভাবে বাংলাদেশকে তিনটি প্রধান অঞ্চলে ভাগ করা হয়েছে। সিলেট বিভাগসহ নেত্রকোনা, শেরপুর, কুড়িগ্রাম জেলা এবং ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, জামালপুর, গাইবান্ধা, রংপুর ও লালমনিরহাট জেলার অংশবিশেষ সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার মধ্যে রয়েছে। ঢাকা, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ইত্যাদি জেলা মাঝারি ঝুঁকিপ্রবণ এলাকায় পড়েছে। (চিত্র-ক)

চিত্র-কঃ ভূমিকম্প ঝুঁকি অঞ্চল (সূত্রঃ উইকিপিডিয়া)
চিত্র-কঃ ভূমিকম্প ঝুঁকি অঞ্চল (সূত্রঃ উইকিপিডিয়া)
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে সর্বশেষ সবচেয়ে বড় ভূমিকম্প সংঘটিত হয়েছিল ১৯১৮ সালে তৎকালীন শ্রীমঙ্গল বা সিলেট অঞ্চলে। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৭.৬। এছাড়া, ১৮৯৭ এবং ১৯৫০ সালে আসামে যে দু’টো বিশাল ভূমিকম্প হয়েছিল, তা ছিল সিলেট সীমান্ত থেকে খুব কাছেই। বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব সীমান্তের খুব কাছে ডাউকি ফল্ট (চিত্র-খ) এবং ইউরেশিয়া-ইন্ডিয়ান প্লেটের সংযোগস্থলের অবস্থান হওয়ায় এ অঞ্চল ভূমিকম্পের জন্য খুব ঝুঁকিপূর্ণ।
চিত্র-খঃ বিভিন্ন এলাকায় সম্ভাব্য ভূমিকম্প মাত্রা (সূত্রঃ বাংলাপিডিয়া)
চিত্র-খঃ বিভিন্ন এলাকায় সম্ভাব্য ভূমিকম্প মাত্রা (সূত্রঃ বাংলাপিডিয়া)

ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহর ভূমিকম্পের ক্ষেত্রে মাঝারি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় অবস্থিত হলেও বিশেষ করে ঢাকায় অপরিকল্পিত নগরায়ন, নাজুক দালান-কোঠা এবং অত্যধিক জনসংখ্যা ভূমিকম্পে ক্ষয়-ক্ষতির সংখ্যা অনেক বাড়িয়ে দিতে পারে। ১৮৮৫ সালে ঢাকার কাছে মানিকগঞ্জে বিশাল এক ভূমিকম্প হয়েছিল (আনুমানিক ৭ থেকে ৮ মাত্রার) যা ইতিহাসে ‘বেঙ্গল আর্থকোয়েক’ নামে পরিচিত। এখন যদি ঢাকায় এ ধরনের কোনো ভূমিকম্প হয়, তবে অবস্থা কী হতে পারে তা সহজেই অনুমেয়। চট্টগ্রামেও ১৭৬২ সালে চট্টগ্রাম-আরাকান সীমান্তে একটি বড় ভূমিকম্প হয়েছিলো। সাম্প্রতিককালে, চট্টগ্রামে ১৯৯৭ সালে ৬.১ মাত্রার ভূমিকম্পে ২৩ জন লোক নিহত হয়েছিল।


ভূমিকম্পের ফলে ক্ষয়ক্ষতির তীব্রতার যে মাত্রা রয়েছে সে সূচক অনুযায়ী ঢাকা পৃথিবীর শীর্ষ ২০ টি ঝুঁকিপূর্ণ শহরের অন্যতম। ভূমিকম্প ঝুঁকি অনুযায়ী ঢাকাকে চারটি এলাকায় ভাগ করা যায় (চিত্র-গ)। ম্যাপে দেখা যাচ্ছে উত্তরা এলাকা সবচেয়ে কম ঝুঁকিপূর্ণ এবং খিলগাঁও, বাড্ডা, গুলশান, ক্যান্টনমেন্ট এবং পুরনো ঢাকার বুড়িগঙ্গা সংলগ্ন অঞ্চল বেশি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় রয়েছে।
চিত্র-গঃ ঢাকার ভূমিকম্প ঝুঁকি এলাকা (সূত্রঃ ডেইলি স্টার)
চিত্র-গঃ ঢাকার ভূমিকম্প ঝুঁকি এলাকা (সূত্রঃ ডেইলি স্টার)
ভূমিকম্পের সময় আসলে কতটুকু সময় পাওয়া যায়?
ভূমিকম্পের সময় প্রথম যে কম্পন টের পাওয়া যায় তা হলো প্রাইমারি ওয়েভ বা P-wave. এর গতিবেগ ১-১৪ কিমি/সে পর্যন্ত হতে পারে। এরপর আসে সেকেন্ডারি ওয়েভ বা Shear wave যার গতিবেগ ১-৮ কিমি/সে। এ দু’টো বডি ওয়েভ (চিত্র-ঘ)। এছাড়া লাভ এবং রেলেই নামে আরো দু’টো ওয়েভ আছে যেগুলো সারফেস ওয়েভ এবং তুলনামূলকভাবে শ্লথগতিসম্পন্ন।

চিত্র-ঘঃ ভূমিকম্পের সময় অনুভূত বিভিন্ন প্রকারের ওয়েভ
চিত্র-ঘঃ ভূমিকম্পের সময় অনুভূত বিভিন্ন প্রকারের ওয়েভ

আমরা ভূমিকম্পে যে ঘরবাড়ি, অবকাঠামো ধ্বংস হতে দেখি তার জন্য মূলত দায়ী সেকেন্ডারি ওয়েভ এবং সারফেস ওয়েভগুলো- কারণ, এগুলোই সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী। এখন প্রাথমিক ভূ-কম্পন বা P-wave টের পাবার কতো সময় পর বাকিগুলো টের পাবেন? উত্তর হচ্ছে ব্যবধান খুব সামান্য। ধরুন আপনার অবস্থান ভূমিকম্পের এপিসেন্টার বা উৎপত্তিস্থল থেকে ২০০ কিমি দূরে। সেকেন্ডে যদি ১৪ কিমি বেগে P-wave আসে তবে ২০০ কিমি অতিক্রম করতে সময় নেবে প্রায় ১৪ সেকেন্ড। আর এরপর ৮ কিমি/সে বেগে সেকেন্ডারি ওয়েভ আসতে সময় নেবে প্রায় ২৫ সেকেন্ড। অর্থাৎ আপনি ভূমিকম্প টের পাবার মোটামুটি ১১ সেকেন্ডের ব্যবধানে ধ্বংসযজ্ঞ শুরু হয়ে যাবে। এর মধ্যেই আপনাকে আত্মরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।

প্রস্তুতি

• আপনি যদি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় থাকেন তবে খোঁজ নিন আপনার ভবনটিতে ভূমিকম্পরোধক ব্যবস্থা আছে কিনা, থাকলে তা কী মাত্রার ভূমিকম্প সহ্য করতে পারবে। যদি না থাকে তবে রেট্রোফিটিং-এর ব্যবস্থা নিন। কম ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় পুরনো ভবনেও রেট্রোফিটিং-এর ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন। জাপানে ভূমিকম্প একটি নৈমিত্তিক ঘটনা। কিন্তু তাদের ভবনগুলিতে ভূমিকম্পরোধক ব্যবস্থা থাকায় তাদের ক্ষয়ক্ষতি হয় অতি সামান্য।


• পরিবারের সবার সাথে বসে এ ধরনের জরুরী অবস্থায় কি করতে হবে, কোথায় আশ্রয় নিতে হবে- মোট কথা আপনার পরিবারের ইমার্জেন্সি প্ল্যান ঠিক করে সব সদস্যদের জানিয়ে রাখুন। ভূমিকম্পের সময় হাতে খুব সামান্যই সময় পাওয়া যাবে। এ সময় কী করবেন তা সবাইকে নিয়ে আগেই ঠিক করে রাখুন।


• বড় বড় এবং লম্বা ফার্নিচারগুলোকে যেমন- শেলফ ইত্যাদি দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখুন যেন কম্পনের সময় গায়ের উপর পড়ে না যায়। আর টিভি, ক্যাসেট প্লেয়ার ইতাদি ভারী জিনিষগুলো মাটিতে নামিয়ে রাখুন।


• বিছানার পাশে সবসময় টর্চলাইট, ব্যাটারী এবং জুতো রাখুন।


• বছরে একবার করে হলেও ঘরের সবাই মিলে আসল ভূমিকম্পের সময় কী করবেন তার একটা ট্রায়াল দিন।


ভূমিকম্পের সময় করণীয়

নিচের পরামর্শগুলো বেশি কার্যকরী যদি ভবনে ভূমিকম্পরোধক ব্যবস্থা থাকেঃ


১। ভূমিকম্পের সময় বেশি নড়াচড়া, বাইরে বের হবার চেষ্টা করা, জানালা দিয়ে লাফ দেবার চেষ্টা ইত্যাদি থেকে বিরত থাকা উচিত। একটা সাধারণ নিয়ম হল- এ সময় যত বেশি মুভমেন্ট করবেন, তত বেশি আহত হবার সম্ভাবনা থাকবে। আপনার ভবনে যদি ভূমিকম্পরোধক ব্যবস্থা থাকে বা রেট্রোফিটিং করা থাকে তবে ভূমিকম্পের সময় বাসায় থাকাই সবচেয়ে নিরাপদ।


২। আমেরিকান রেডক্রসের পরামর্শ অনুযায়ী- ভূমিকম্পের সময় সবচেয়ে উত্তম পন্থা হল ‘ড্রপ-কাভার-হোল্ড অন’ বা ‘ডাক-কাভার’ পদ্ধতি। অর্থাৎ কম্পন শুরু হলে মেঝেতে বসে পড়ুন, তারপর কোন শক্ত টেবিল বা ডেস্কের নীচে ঢুকে কাভার নিন, এমন ডেস্ক বেছে নিন বা এমনভাবে কাভার নিন যেন প্রয়োজনে আপনি কাভারসহ মুভ করতে পারেন।
কোনো ভবন ভূমিকম্পরোধক হলে তা খুব কমই ধসে পড়ে; যেটা হয় তা হল আশেপাশের বিভিন্ন জিনিস বা ফার্নিচার গায়ের উপর পড়ে আহত হবার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই এগুলো থেকে বাঁচার জন্য এ সময় কোন শক্ত ডেস্ক বা টেবিলের নিচে ঢুকে আশ্রয় নেয়া জরুরী।


৩। ভূমিকম্পের সময় এলিভেটর/লিফট ব্যবহার পরিহার করুন।


৪। ভূমিকম্পের সময় যদি গাড়িতে থাকেন তবে গাড়ি বন্ধ করে ভেতরে বসে থাকুন। গাড়ির বাইরে থাকলে আহত হবার সম্ভাবনা বেশি থাকে।


৫। ‘মেইন শক’ বা মূল ভূমিকম্পের আগে এবং পরে মৃদু থেকে মাঝারি আরো কিছু ভূমিকম্প হতে পারে যেগুলো ‘ফোরশক’ এবং ‘আফটার শক’ নামে পরিচিত। সতর্ক না থাকলে এগুলো থেকেও বড় বিপদ হয়ে যেতে পারে। সাধারণত কোনো বড় ভূমিকম্পে ‘আফটার শক’ প্রথম ঘণ্টার মধ্য থেকে শুরু করে কয়েক দিনের মধ্যে হতে পারে।


৬। প্রথম ভূমিকম্পের পর ইউটিলিটি লাইনগুলো (গ্যাস, বিদ্যুত ইত্যাদি) একনজর দেখে নিন। কোথাও কোন লিক বা ড্যামেজ দেখলে মেইন সুইচ বন্ধ করে দিন।

ধ্বংসস্তুপে আটকে পড়লে করণীয়


১। ধুলাবালি থেকে বাঁচার জন্য আগেই সাথে রুমাল বা তোয়ালে বা চাদরের ব্যবস্থা করে রাখুন।


২। ম্যাচ জ্বালাবেন না। দালান ধ্বসে পড়লে গ্যাস লিক হয়ে থাকতে পারে।


৩। চিৎকার করে ডাকাডাকি শেষ অপশন হিসেবে বিবেচনা করুন। কারণ, চিৎকারের সময় মুখে ক্ষতিকারক ধুলাবালি ঢুকে যেতে পারে। পাইপে বা ওয়ালে বাড়ি দিয়ে বা মুখে শিস বাজিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করতে পারেন। তবে ভাল হয় সাথে যদি একটা রেফারির বাঁশি বা হুইসেল থাকে, তার প্রিপারেশন নিয়ে রাখুন আগেই।