Thursday, December 30, 2010

বিপদাপন্ন বাদামি ঘুরাল

বিপদাপন্ন বাদামি ঘুরাল

খসরু চৌধুরী | তারিখ: ২৭-০৯-২০১০

ডুলাহাজারার বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে বিপদাপন্ন প্রাণী বাদামি ঘুরাল
প্রকৃত বন্য ছাগল বা মেষ—যেমন আইবেক্স, থর, ভারাল, শাপু, মারখর, মার্কোপোলোর ভেড়া ইত্যাদি পার্বত্য প্রাণীগুলোর অস্তিত্বের কোনো রেকর্ড বাংলাদেশ সীমানায় পাওয়া যায়নি। কিন্তু উপমহাদেশের তিনটি ছাগ-এন্টিলোপের দুটি—সারাও এবং ঘুরাল সম্ভবত বাংলাদেশে পাওয়া যায়। এদের মধ্যে সারাওয়ের অস্তিত্বের প্রমাণ চুনতি অভয়ারণ্যে এবং মিরসরাইয়ের করেরহাটের বনে পেয়েছি। বান্দরবানের সাজেক উপত্যকা ও মিয়ানমার সীমান্তবর্তী পাহাড়ে প্রাণীটি আছে বলে শুনেছি।
ঘুরালের কথা খুব একটা শোনা যায় না। তবে মিয়ানমারের চিন্দুইন পাহাড়শ্রেণী ও আরাকান ইয়োমার যে অংশ বাংলাদেশে পড়েছে, সেখানে ঘুরালের অস্তিত্ব আছে বলে জানা গেছে। অবিভক্ত বাংলায় তিস্তা নদীর পার্বত্য চলার পথে একসময় প্রচুর ঘুরাল ছিল।
ঘুরালকে ছাগ-এন্টিলোপ বলা হয়। কারণ, এদের গড়ন ও দৈহিক বৈশিষ্ট্য কিছুটা ছাগলের মতো, কিছুটা এন্টিলোপের মতো।
ঘুরাল (Nemorhacdus goral) মধ্যম আকারের প্রাণী। কাঁধের উচ্চতা ২৬ থেকে ২৮ ইঞ্চি, ওজন ২৭ কেজির মতো হয়। মাথা থেকে লেজের গোড়া পর্যন্ত লম্বায় ১২৫ সেন্টিমিটার। লেজ ১০ সেন্টিমিটার, শিং ২০ সেন্টিমিটার।
ঘুরালের দুটি উপপ্রজাতি আছে। পশ্চিম হিমালয়ে পাওয়া যায় ছাইরঙা ঘুরাল (N.g.goral) আর পূর্ব হিমালয়, মিয়ানমার, বাংলাদেশে পাওয়া যায় বাদামি ঘুরাল (N.g.hodgsoni) ।
বাদামি ঘুরালের লোমের রং সোনালি-বাদামি, কোথাও কোথাও কালো ছোপ আছে। ঘাড় থেকে মেরুদণ্ডের ওপর দিয়ে কালো দাগ চলে গেছে লেজের ওপরিভাগ পর্যন্ত। হালকা কালো দাগ দেখা যায় ঊরুদেশে। গলার কাছটা ময়লাটে সাদা। ঘুরালের লোম খসখসে, কিছুটা অবিন্যস্ত। এদের শিং পেছনের দিকে বাঁকানো, বেশির ভাগ অংশ খাঁজকাটা। মেয়ে-পুরুষ উভয় ঘুরালেরই শিং গজায়। বাচ্চাদের রং অনেকটা লালচে ধাঁচের। এদের সামনের পায়ের খুরের ওপরে তরল গন্ধ নিঃসরণী ছিদ্র আছে। এই গন্ধ দিয়ে তারা নিজেদের এলাকা চিহ্নিত করে থাকে। এদের নাক-মুখের গড়ন থ্যাবড়ানো। এরা সাধারণত পাহাড়ের তিন হাজার ফিটের নিচে নামে না। এমনিতে একাকী প্রাণী হলেও চার থেকে আটটি প্রাণীর দলও কাছাকাছি থাকে।
ঘুরাল পাহাড়িপথে চলাফেরা করা প্রাণীদের মধ্যে অত্যন্ত পারদর্শী হিসেবে পরিচিত। পর্বতের খাড়া শিলাময় ধাপের ঘাসের জঙ্গল, ঝোপঝাড়ে এরা চরে বেড়ায়। সকাল, সন্ধ্যায় এরা বেশি কর্মতৎপর। তবে মেঘলা দিনে সারা দিনই এরা খাবারে ব্যস্ত থাকে। এরা লাফাতে, দৌড়াতে পারে অত্যন্ত দ্রুততায়। ভয় পেলে এদের বিপদজ্ঞাপক ডাক শুনতে অনেকটা মানুষের হাঁচির শব্দের মতো লাগে। বাংলাদেশে ঘুরাল অত্যন্ত বিপদাপন্ন প্রাণী।
Source:

Prothom Alo


No comments:

Post a Comment