Thursday, December 30, 2010

চট্টগ্রামের বনাঞ্চল ছাড়ছে হাতি

চট্টগ্রামের বনাঞ্চল ছাড়ছে হাতি এস এম রানা, চট্টগ্রাম, ১২ ডিসেম্বর ২০১০ চট্টগ্রামের বনাঞ্চলে হাতি চলাচলের পথ (করিডর) ১০টি। এর মধ্যে তিনটিতেই এখন হাতির বিচরণ নেই। গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেমের (জিপিএস) মাধ্যমে পরিচালিত সমীক্ষায় এটি নিশ্চিত হওয়া গেছে। বন্য প্রাণী নিয়ে কাজ করা দি ওয়ার্ল্ড কনজারভেশন ইউনিয়ন (আইইউসিএন) গত নভেম্বরে এ সমীক্ষা চালায়। সমীক্ষার ফলাফলে বলা হয়, ফাঁদ পেতে হত্যা, দুর্ঘটনা, খাদ্য সংকট, আবাসস্থলে মানববসতি, সড়ক নির্মাণসহ নানা প্রতিকূলতার কারণে বন্য হাতি চট্টগ্রামের বনাঞ্চল ছেড়ে যাচ্ছে।
আইইউসিএনের বাংলাদেশ প্রতিনিধি ড. নিয়াজ আহমদ খান কালের কণ্ঠকে বলেন, 'হাতির সর্বশেষ অবস্থা জানতে বন বিভাগের সহায়তায় চট্টগ্রামের বিভিন্ন বনাঞ্চলের ১০টি পথে জিপিএস কার্যক্রম চালানো হয়। এর মধ্যে মাটিরাঙা, মহালছড়ি ও লক্ষ্মীছড়ির বনাঞ্চলে হাতির বিচরণ লক্ষ করা যায়নি।' হাতির অবস্থান পর্যবেক্ষণ করতে নতুন করে চুনতি অভয়ারণ্য এলাকায় জিপিএস কার্যক্রম শুরু হবে বলে জানান তিনি। প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, চট্টগ্রাম অঞ্চলে গত দুই বছরে পাঁচটি হাতি
মারা পড়েছে। সর্বশেষ গত শুক্রবার বাঁশখালীতে একটি স্ত্রী হাতি হত্যা করা হয়। গত ২৩ জুন সাতকানিয়ার সোনাকানিয়ায় বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে মারা যায় একটি হাতি। ২০০৯ সালে পাহাড়ি ঢলে হাঙ্গরখাল দিয়ে একটি হাতির মরদেহ ভেসে যেতে দেখা যায়। ২০০৮ সালে সাতকানিয়ায় পাহাড়ের চূড়া থেকে পড়ে মারা যায় একটি হাতিশাবক। এর আগে গুলি করে একটি হাতি হত্যা করা হয়। আবার হাতির আক্রমণে গত তিন বছরে চট্টগ্রাম বিভাগে অন্তত ৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে। সর্বশেষ ৯ ডিসেম্বর রাঙ্গুনিয়ার সুখবিলাস গ্রামে হাতির আক্রমণে এক শিশুর মৃত্যু এবং ১০ জন আহত হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, হাতির চলাচলের পথ নির্দেশ করে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে বনাঞ্চলে নির্দেশক টাঙানো হয়েছে। চকরিয়া-লামা সড়কের পাশে হাতির প্রতীক সংবলিত এই নির্দেশক টাঙিয়েছে আইইউসিএনের বাংলাদেশ কার্যালয়। সড়কের ডান পাশেই টিলায় গাছের ওপর একটি মাচা। হাতির আক্রমণ থেকে বাঁচতে গাছের ডালে মানুষের বসতির ব্যবস্থা এটি।
প্রাণী বিশেষজ্ঞরা জানান, দেশে হাতি চলাচলের তিনটি অঞ্চল হচ্ছে চট্টগ্রাম, সিলেট ও ময়মনসিংহ। বর্তমানে এই অঞ্চলের বেশির ভাগ অংশই মানুষের দখলে চলে গেছে। একসময় চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের বনে হাতির অবাধ বিচরণ থাকলেও এখন চিরহরিৎ বনেই সাধারণত হাতির বিচরণ লক্ষ করা যাচ্ছে। চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া, বোয়ালখালী, চন্দনাইশ, সাতকানিয়া, চুনতি অভয়ারণ্য, বাঁশখালী এবং কঙ্বাজারের টেকনাফ, রাঙামাটির রাজস্থলী ও বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি এলাকা হাতির আবাসস্থল ও বিচরণক্ষেত্র।
বন সংরক্ষক (বন্য প্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ সার্কেল) তপন কুমার দে বলেন, 'জনবসতি ও রাস্তাঘাট নির্মাণের কারণে হাতির অভয়াশ্রম দ্রুত সংকুচিত হচ্ছে। হাতির খাদ্যের অভাবও দেখা দিয়েছে। তাই সামপ্রতিক সময়ে হাতি ও মানুষের দ্বন্দ্বের ঘটনা বেড়েছে। অর্থাৎ হাতির আক্রমণে মানুষ মারা যাচ্ছে। আবার মানুষের আক্রমণে হাতি মারা পড়ছে।'
সর্বশেষ ২০০৪ সালে বাংলাদেশ বন বিভাগ ও আইইউসিএন পরিচালিত এক শুমারিতে দেখা যায়, দেশের ১১টি বন বিভাগে ২৫০ থেকে ৩৫০টি হাতি আছে। এ ছাড়া আরো ৮০ থেকে ১০০টি হাতি মিয়ানমারের আরাকান, ভারতের আসাম, মেঘালয়, মিজোরাম ও ত্রিপুরা থেকে বাংলাদেশে আসা-যাওয়া করে। চিড়িয়াখানা ও বিভিন্ন সার্কাস মিলিয়ে বন্দি হাতির সংখ্যা ৯৪ থেকে ১০০টি।
হাতি সংরক্ষণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ সম্পর্কে বন্য প্রাণী বিশেষজ্ঞ ওয়াইল্ড লাইফ ট্রাস্টের নির্বাহী চেয়ারম্যান অধ্যাপক আনোয়ারুল ইসলাম গতকাল শনিবার কালের কণ্ঠকে বলেন, হাতি সংরক্ষণে বনাঞ্চল রক্ষা, হাতির খাদ্য উপযোগী গাছ লাগানো, বন্য প্রাণী আইন মেনে চলা ও স্থানীয় জনগণকে হাতির আক্রমণ মোকাবিলায় সচেতন করে তোলার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।
Source: Dailykalerkantho

No comments:

Post a Comment