পৃথিবীর প্রাকৃতিক সপ্তাচর্য

উজ্জ্বল দত্ত
পৃথিবী জুড়ে প্রাকৃতিক পর্যটন স্থানগুলো নিয়ে প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্য নির্বাচন সম্পন্ন হয়ে গেল। বিশ্বের প্রায় আড়াই হাজার পর্যটন এলাকা নির্বাচনের ভিত্তিতে ধারাবাহিকভাবে এই প্রতিযোগীতায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। তার মধ্য থেকে প্রাপ্ত সমর্থনের সংখ্যার ভিত্তিতে গত ২৮ জুলাই ২০১১ প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্য ফাউন্ডেশন ২৮টি পর্যটন এলাকাকে চুড়ান্তভাবে ঘোষণা করে। সর্বশেষ সাতটি এলাকা সপ্তাশ্চর্য তালিকায় স্থান পায়। এতে প্রথম স্থানে রয়েছে ব্রাজিলের ‘ইগুয়াজু জলপ্রপাত’, দ্বিতীয় স্থানে দক্ষিণ কোরিয়ার স্বায়ত্তশাসিত দ্বীপ প্রদেশ ‘জেজু আইল্যান্ড’,তৃতীয় স্থানে দক্ষিণ আমেরিকার কয়েকটি দেশস্থিত আমাজন বন, চতুর্থ স্থানে ভিয়েতনামের ‘হা লং উপসাগরীয় উপকূল’, পঞ্চম স্থানে রয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার‘টেবল মাউন্টেইন’, ষষ্ঠস্থান লাভ করেছে ফিলিপাইন দ্বীপপুঞ্জের‘পুয়ের্তো-প্রিনচেসা সাবটারেনিয়ান নদী’ এবং সপ্তম স্থান অর্জন করেছে ইন্দোনেশিয়ার ‘কমোডো ড্রাগন আইল্যান্ড’। পুয়ের্তো-প্রিন্সেসা পাতাল নদী জাতীয় উদ্যান পুয়ের্তো-প্রিন্সেসা পাতাল নদী জাতীয় উদ্যান ফিলিপাইনে। পুয়ের্তো প্রিন্সেসা,পালওয়ান ও ফিলিপাইন সিটির কেন্দ্র থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার উত্তরে এর অবস্থান। দ্বীপের উত্তর উপকূলে সেন্ট পল পর্বতে জাতীয় উদ্যান। এই বন উত্তরের সেন্ট পল উপসাগর থেকে পূর্বের ‘বেবুয়ান’ নদী পর্যন্ত বিস্তৃত। পুয়ের্তো প্রিন্সেসা সরকার ১৯৯২ সাল থেকে জাতীয় উদ্যানটির দায়িত্ব নিয়েছেন। পুয়ের্তো প্রিন্সেসা পাতাল নদীটি সেন্ট পল পাতাল নদী নামেও পরিচিত। সাবাং শহর থেকে একটি উঁচু পথ বেয়ে এই পাতাল নদীতে যেতে হয়। ৮.২ কিলোমিটার দীর্ঘ ভ্রমনযোগ্য এই নদীটিও জাতীয় উদ্যানের অন্তর্ভূক্ত। পশ্চিম ফিলিপাইন সাগরের নোনা বাতাস নদী প্রবেশের গুহামুখ বেয়ে নদীতে প্রবাহিত হয়; এই বৈচিত্র্য নদীটিকে স্বাতন্ত্র্য এনে দিয়েছে। পুয়ের্তো-প্রিন্সেসা নদীর উপরিদেশ এবং তলদেশে চুনাপাথরের বেশ কিছু লম্বালম্বি স্তম্ভ (স্ট্যালেগটাইট ও স্ট্যালেগমাইট) রয়েছে। সুদীর্ঘ সময় ধরে জলধারা নিঃসৃত হওয়ার ফলে ভূঅভ্যন্তরস্থ চাপে গলিত চুন বাইরে বেরিয়ে স্তম্ভের আকার ধারন করেছে। নদীর তলদেশে এই প্রক্রিয়া এখনও চলছে। ২০০৭ সাল পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যে, মেক্সিকোর ‘ইউকাতান পেনিনসুলা’ এবং ফিলিপাইনের ‘পুয়ের্তো প্রিন্সেসা’ পাতাল নদী আবিস্কারের কথা জানা যায়। পুয়ের্তো-প্রিন্সেসা পৃথিবীর সর্বদীর্ঘ পাতাল নদী। এশিয়ার অনেক গুরুত্বপূর্ন অরণ্যের জীববৈচিত্র্য এবং পর্বত আর সামুদ্রিক ইকোসিস্টেমের একটি পুর্নাঙ্গ বৈশিষ্ট্য এই পাতাল নদী এবং জাতীয় উদ্যানে বিদ্যমান। গবেষকরা এই বনে প্রায় ৮শ প্রজাতির উদ্ভিদের সন্ধান পেয়েছেন। এদের মধ্যে কমপক্ষে ২৯৫ প্রজাতির বৃক্ষ রয়েছে যারা পরগাছা গোত্রের উদ্ভিদ দ্বারা প্রভাবিত। নিম্নভূমির নাতিশীতোষ্ণ অরণ্যে বৃহৎ বৃক্ষের মধ্যে দাউ,আইপিল,দিটা,এ্যামুগিস এবং আপিটং উল্লেখযোগ্য। উপকূলীয় বনভূমিতে বিটাওগ,পনজামিয়া পিনাটা, ইরিনথিয়া ওয়েরিয়েনটালিস,এ্যালমেসিগা,কামাগং, পানদান এনিবং এবং রাত্তানসহ নাতিশীতোষ্ণ অরণ্যের বৃক্ষগুলোও জন্মে। এই উদ্যানে অনেক প্রজাতির পাখির বিচরণ দেখা যায়। পালাওয়ান সীমানায় ২৫২ প্রজাতির পাখির বাস । বনে এরা ছাড়াও ১৬৫ প্রজাতির পাখি বাস করে। পার্কের ৬৭ শতাংশ পাখিই পালাওয়ান বনের। সংক্রামক রোগবাহী পাখিদের ১৫টি প্রজাতিই পালাওয়ানের। নীল গলা টিয়া, শক্ত,খাড়া পালকওয়ালা টেবন পাখি,পাহাড়ী ময়না,পালাওয়ানী ধনেশ পাখি ও শ্বেত বক্ষের সামুদ্রিক ঈগল এই বনের উল্লেখযোগ্য পাখি। প্রায় ৩০ প্রজাতির স্তন্যপায়ীর বসবাস লক্ষ্য করা যায়। জোয়ারের সময় বনের আকাশে এবং সৈকতে বাচ্চাদের খাবার সংগ্রহের জন্য লম্বা লেজওয়ালা ম্যাকাকা দেখা যায়। পাখি গোত্রে এরাই সর্বোচ্চ শ্রেণীর স্তন্যপায়ী। অন্য স্তন্যপায়ীর মধ্যে গোঁফওয়ালা শুকর,পশমি বিড়াল,পালওয়ানী গন্ধব্যাজার এবং পালওয়ানী সজারু উল্লেখযোগ্য। এ পর্যন্ত ১৯ প্রজাতির সরীসৃপ আবিস্কৃত হয়েছে,তন্মধ্যে ৮টি প্রজাতি রোগবাহী। মাংসাশী শিকারী মধ্যে ডোরাকাটা পাইথন(অজগর),বহুরূপী গিরগিটি এবং সবুজ রঙা টিকটিকির দেখা পাওয়া যায়। উভচরের মধ্যে এই অঞ্চলে ১০টি প্রজাতির বিচরণ চোখে পড়ে। ফিলিপাইন উডল্যান্ড ব্যাঙ তুলনামুলক এই বনের সবচেয়ে দ্রুতগামী প্রাণী। বারবোরশুলা নামের প্রাণীটি একমাত্র পালওয়ান অঞ্চলে দেখা যায়। তাছাড়া গুহাগুলোতে ৯ প্রজাতির বাঁদুর এবং ২ প্রজাতির দ্রুত ও বিষাক্ত মাকড়সা বাস করে। পার্কের উপকূলীয় অঞ্চলে সমুদ্রগাভী নামে পরিচিত সীল এবং হক্সবিল কচ্ছপের বিচরণ দেখা যায়।
উইকিপিডিয়া অবলম্বনে
১০ ই জুন ২০১২
Source: www.dainikazadi.org
উইকিপিডিয়া অবলম্বনে
১০ ই জুন ২০১২
Source: www.dainikazadi.org
No comments:
Post a Comment