Sunday, June 17, 2012

নতুন সপ্তাশ্চর্য

নতুন সপ্তাশ্চর্য

সুইজারল্যান্ড ভিত্তিক সংগঠন 'New Seven Wonders Foundation' ২০০৭ সালে ২২০টি দেশের ৪৫০টি স্থানের প্রাথমিক তালিকা প্রণয়ন করে। ইন্টারনেটে ভোটিং-এর মাধ্যমে ২০০৯ সালের ৭ জুলাই শীর্ষ ৭৭টি স্থানের তালিকা প্রকাশ করে। এখান থেকে বাছাই করে ২৮টি চূড়ান্ত প্রতিযোগী স্থানের নাম প্রকাশ করে ২০০৯ সালের ২১ জুলাই। ২৮টি স্থান নিয়ে শুরু হয় চূড়ান্ত ভোটিং কার্যক্রম। প্রথমে অবশ্য ই-মেইলের মাধ্যমে দেয়া গেলেও পরে ফোন এবং এসএমএস-এর মাধ্যমে ভোট দেয়ার সুযোগ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। এ কার্যক্রম চলে ১১.১১.২০১১ পর্যন্ত। এরপর প্রাথমিকভাবে সপ্তাশ্চর্যের তালিকা ঘোষণা করা হয়। সপ্তাশ্চর্য পরিচিতি সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো :

আমাজন (দক্ষিণ আমেরিকা) : প্রশস্ততার দিক দিয়ে পৃথিবীর বৃহত্তম নদী হচ্ছে আমাজন নদী। এটা আমাজন রেইন ফরেস্ট। আমাজোনিয়া, আমাজন জঙ্গল বা আমাজন বেসিন নামে সর্বাধিক পরিচিত। দক্ষিণ আমেরিকার ৯টি (বলিভিয়া, ব্রাজিল, কলম্বিয়া, ইকুয়েডর, ফ্রেন্স গায়ানা, গায়ানা, পেরু, সুরিনাম ও ভেনেজুয়েলা) দেশজুড়ে রয়েছে আমাজন নদী এবং বনের অবস্থান। এটা প্রায় ৫৫ লাখ বর্গ কিলোমিটার জায়গা জুড়ে বিস্তৃত। আমাজন নদীর পানি প্রবাহ পৃথিবীর বৃহৎ ১০টি নদীর পানি প্রবাহের চেয়ে বেশি। পৃথিবীর মোট পানি প্রবাহের প্রায় ১৫ শতাংশ প্রবাহিত হয় এ নদী দিয়ে। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, এত বৃহৎ নদী হওয়া সত্ত্বেও এর উপর কোন ব্রিজ নেই।

হালং বে (ভিয়েতনাম) : ১৯৯৪ সালে ইউনেস্কো কর্তৃক বিশ্ব ঐতিহ্যের অন্তর্ভুক্ত করা হয় ভিয়েতনামের কুয়াংনিহ প্রদেশের উপসাগর হালং বে। এর আয়তন ১৫৫৩ বর্গ কিলোমিটার। এতে প্রায় ২০০০টি ক্ষুদ্র দ্বীপ রয়েছে যার অধিকাংশই পাথরের। এর উপকূল রেখা দৈর্ঘ্যে প্রায় ১২০ কিলোমিটার। হালং বে উপসাগরে প্রায় ২০০ প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়। এর ভেতরে পাথরের তৈরি দ্বীপগুলোর মাঝে রয়েছে অসংখ্য হ্রদ। ডাউ বি (Dau Be) এ রকমই একটি দ্বীপ যার মধ্যে রয়েছে ৬টি হ্রদ।

টেবল মাউন্টেন (দক্ষিণ আফ্রিকা) : টেবল মাউন্ট হচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউনে অবস্থিত একটি পর্বত, যা কেপটাউনের সবচেয়ে আকর্ষণীয় একটি স্তম্ভ। এই স্তম্ভ আকৃতির পর্বতের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এখানে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে উদ্ভিদরাজির সমাহার। প্রায় ১৪৭০ প্রজাতির উদ্ভিদ পাওয়া যায় এই পর্বতে। রক হাইর‌্যাক্স (Rock Hyrax) নামের ইঁদুর সদৃশ (আকারে ইঁদুরের চেয়ে বড়) এক প্রকার জন্তু এ পর্বতের প্রধান প্রাণী যারা পাথরের কোটরে বাস করে। টেবল মাউন্টেনের সর্বোচ্চ চূড়া সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১০৮৬ মিটার উঁচুতে।

ইগুয়াজু ফলস (আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিল) :

পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্তম জলপ্রপাত হচ্ছে ইগুয়াজু ফলস। ফুটবল বিশ্বের দুই পরাশক্তি আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলকে একই সুতায় গেঁথেছে এই ইগুয়াজু ফলস। ৬০-৮০ মিটার উচ্চতা সম্পন্ন জলপ্রপাতটি ব্রাজিল এবং আর্জেন্টিনা সিমান্তে অবস্থিত। ইগুয়াজু ফলস-এর সর্বোচ্চ উঁচু স্থানটির নাম ‘ডেভিল'স থ্রোট'। জলপ্রপাতটির পানি প্রবাহের মূল উৎস হচ্ছে ইগুয়াজু নদী।

জেজু আইল্যান্ড (দক্ষিণ কোরিয়া) :

জেজু দ্বীপ দক্ষিণ কোরিয়ার উপকূল থেকে ১৩০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত। দেখতে অনেকটা আগ্নেয়গিরির মতো হওয়ায় অনেকে একে আগ্নেয়গিরি সদৃশ দ্বীপও বলে। এটা দক্ষিণ কোরিয়ার সর্ববৃহৎ দ্বীপ। জেজু দ্বীরে উপরিভাগের আয়তন প্রায় ১৮৪৬ বর্গ কিলোমিটার। হাল্লাসান পর্বত হচ্ছে এর সর্বোচ্চ বিন্দু যার উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৯৫০ মিটার।

কোমোডো ন্যাশনাল পার্ক (ইন্দোনেশিয়া) :

কোমোডো, রাইকান এবং প্যাডার দ্বীপ নিয়ে গঠিত ইন্দোনেশিয়ার কোমোডো ন্যাশনাল পার্ক। তবে এই তিনটি দ্বীপ ছাড়াও এর সাথে ছোট ছোট আরো অনেকগুলো দ্বীপ রয়েছে। ন্যাশনাল পার্কটির আয়তন ১৮১৭ বর্গ কিলোমিটার। মূলত কোমোডো ড্রাগন (এক প্রকার গুইসাপ)দের রক্ষা করার জন্যই কোমোডো ন্যাশনাল পার্কটি তৈরি করা হয়েছিল। বর্তমানে এটি ৪২ প্রজাতির প্রাণীর অভয়ারণ্য। ১৯৯১ সালে ইউনেস্কো কর্তৃক কোমোডো ন্যাশনাল পার্কটি বিশ্ব ঐহিত্যের (World Heritage site) অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

পুয়েতো প্রিন্সিয়া আন্ডারগ্রাউন্ড রিভার (ফিলিপাইন) :

ফিলিপাইনের পুয়েতো প্রিন্সিয়া শহর থেকে ৫০ কিলোমিটার উত্তরে ‘পুয়ের্তো প্রিন্সিয়া আন্ডারগ্রাউন্ড রিভার' অবস্থিত। ৮.২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এ নদীটি একটি পাথরের পর্বতের নিচে দিয়ে প্রবাহিত হয়ে একটি গুহা অতিক্রম করে দক্ষিণ চীন সাগরে পতিত হয়েছে। এটিই পৃথিবীর দীর্ঘতম আন্ডারগ্রাউন্ড রিভার। নদীটি গুহার মধ্য দিয়ে চলার সময় বিভিন্ন ধরনের ভূমিরূপের সৃষ্টি করেছে। অনেক পর্যটক এখানে ভ্রমণ করে। ১৯৯২ সালে পুয়ের্তো প্রিন্সিয়া আন্ডারগ্রাউন্ড রিভারটি ন্যাশনাল পার্কের আওতায় নিয়ে আসা হয়।

-মহিউদ্দিন নোমান

No comments:

Post a Comment