Tuesday, October 9, 2012

বাংলাদেশের জন্য বিরল সম্মান: ডিসকভারী চ্যানেলের ‘সুপার হিউম্যান' মার্শাল আর্ট গ্র্যান্ড মাস্টার ড. ইউরী

বাংলাদেশের জন্য বিরল সম্মান:
ডিসকভারী চ্যানেলের ‘সুপার হিউম্যান' মার্শাল আর্ট গ্র্যান্ড মাস্টার ড. ইউরী
 
সাদেকুর রহমান : একজন অসাধারণ, বিশ্ব রেকর্ডধারী ব্যক্তি তিনি। এ উপমহাদেশের প্রাচীন আত্মরক্ষামূলক শিল্পকলা ব্যুত্থান আর্ট যার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বিশ্বব্যাপী আজ পরিচিত ও সমাদৃত। সর্বান্তকরণে বাংলাদেশী এই মানুষটি পৃথিবীর অন্যতম শীর্ষস্থানীয় মার্শাল আর্ট গ্র্যান্ড মাস্টার। মার্শাল আর্টের ওপর দেশের একমাত্র পিএইচডি ডিগ্রীধারী ব্যক্তিত্ব মিলিটারী আন-আর্মড কমব্যাট, ল-এনফোর্সমেন্ট, কাউন্টার-টেরোরিস্ট অ্যান্ড সিকিউরিটি বিশেষজ্ঞ ও প্রশিক্ষক হিসেবে নিজ মানচিত্রের বাইরেও বিপুল সমাদৃত। তিনি ড. মুহাম্মদ আনোয়ার কামাল ইউরী। ড. ম্যাক ইউরী বা ড. ইউরী নামেই জগদ্বিখ্যাত তিনি।
নিজ দেশের প্রায় অপরিচিত হলেও তিনি তার অতিমানবীয় সিনবোন কিকের জন্য দুনিয়া জোড়া ‘থান্ডার সিনম্যান' হিসেবে ইতিমধ্যেই ব্যাপক পরিচিতি ও প্রশংসা অর্জন করেন। তাকে নিয়েই আন্তর্জাতিক টিভি চ্যানেল ডিসকভারী নির্মাণ করেছে একটি বিশেষ ডকুমেন্টারী। চ্যানেল কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বিশ্বের আরো আটজন মেধাবী, সমকালীন সেরা কীর্তিমান ব্যক্তিত্বের পাশাপাশি ড. ইউরীর পেশাগত জীবনীভিত্তিক ডকুমেন্টারীটি উক্ত চ্যানেলে প্রদর্শিত হচ্ছে। ওয়াকিবহাল মহল বলছেন, যে কোনো বিচারে এটি বাংলাদেশের জন্য বিরল সম্মান ও অর্জন।
আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মার্শাল আর্ট গ্র্যান্ড মাস্টার ড. ইউরী ডিসকভারী চ্যানেলে তার উপর ডকুমেন্টারী প্রদর্শনের প্রতিক্রিয়ায় দৈনিক সংগ্রামকে জানান, খুব ভালোই লাগছে। আবার কষ্টও লাগে- যখন দেখি দেশের মানুষের অবজ্ঞা-অবহেলা। দেশের মানুষ সম্মান না দিলে বিদেশীরা যতই সম্মানিত করুক তাতে কি তৃষ্ণা মিটে। কথা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ডিসকভারী কর্তৃপক্ষ প্রাথমিকভাবে ৪০ জন যশস্বী ব্যক্তিত্বকে নির্বাচন করেছিল। সেখান থেকে তারা তাদের মানদন্ড বিবেচনায় মোট নয়জনকে চূড়ান্তভাবে নির্বাচন করে ‘সুপার হিউম্যান শোডাউন' শিরোনামের ডকুমেন্টারী বানায়। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চ্যানেলটির নিয়ন্ত্রণ করে শক্তিধর একটি দেশ, তারা ঠিকমতো শিডিউল পর্যন্ত দেয়নি। তাই সুপার হিউম্যান (অতিমানব) অনুষ্ঠানটি নিয়মিত দেখানো শুরু হলেও কোন ব্যক্তিত্বকে কখন দেখানো হবে তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তবে একেকজন ‘সুপার হিউম্যান'কে পঞ্চাশ বার করে দেখানো হবে বলে জানান ড. ইউরী। গ্রান্ডমাস্টার ড. ইউরী ভারতের কাঞ্চিপুরম ও চীনের শাওলিনটেম্পল-এ অনুসন্ধানী গবেষণার মাধ্যমে ভারতীয় মার্শাল আর্ট-এর লুপ্ত প্রায় ইতিহাস ও ঐতিহ্য পুনরুদ্ধার করেন। তিনি মার্শাল আর্ট-এর সর্বোচ্চ পদাধিকারী (দশম লেভেল, ব্ল্যাক বেল্টধারী) এবং ব্যুত্থান মার্শাল আর্ট সিস্টেমের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি মার্শাল আর্ট জগতের বিশিষ্ট চিন্তাবিদ, বিশেষজ্ঞ অথরিটি হিসেবে বিবেচিত এবং পৃথিবীর ৬টি শীর্ষস্থানীয় কর্তৃপক্ষ কর্তৃক সর্বোচ্চ ক্যাটাগরিতে গ্রান্ডমাস্টার অফ দি ইয়ার হিসেবে অভূতপূর্ব স্বীকৃতি অর্জন করে পৃথিবীব্যাপী চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেন। ড. ইউরী বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় মার্শাল আর্ট গ্র্যান্ডমাস্টারদের আন্তর্জাতিক সংস্থা ওয়ার্ল্ড গ্রান্ডমাস্টারস কাউন্সিল, আমেরিকা-এর সর্বোচ্চ পুরস্কার ‘গ্রান্ড মাস্টার পিনাকেল অ্যাওয়ার্ড-২০০৯' লাভ করেন। অসাধারণ প্রতিভাবান ক্যাডেট হিসেবে তিনি বরাবরই কৃতিত্বপূর্ণ সাফল্যের সাথে পরিচয় দিয়ে এসেছেন। মিলিটারি সাইন্স, ফিজিক্যাল ট্রেনিং, অবস্ট্রাকল কোর্স, আন আর্মড কমব্যাট, মিলিটারি ড্রিলস প্যারেডের মতো বিষয়সমূহে। সেই সাথে, চৌকস নৈপুণ্যের জন্য তিনি বরাবরই পাইলট ইউনিট কালার পার্টির অগ্রভাগে জাতীয় পতাকা বহনের মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বটি সূচারুসরূপে পালন করতেন। তিনি হাতে গোনা কয়েকজন ডিস্টিংগুইস্ট ক্যাডেট পদকপ্রাপ্তদের অন্যতম হওয়ার বিরল সৌভাগ্য লাভ করেন। মাত্র ১১ বছর বয়সে। তিনি বার্মিজ ক্লাসিক্যাল আন আর্মড কমব্যাট ও অস্ত্রবিদ্যা ভিত্তিক (বান্ডো ও বানশে) মার্শাল আর্ট চর্চা শুরু করেন।
ব্যুত্থান মার্শাল আর্ট এবং কমব্যাট সেল্ফ ডিফেন্স (সিএসডি) ড. ইউরীর বৈপ্লবিক ও যুগান্তকারী চিন্তার ফসল, যা বিশ্বের দেশ ও সংস্কৃতির মানুষের আধুনিক জীবন-যাত্রার নিজের সুরক্ষা ও সল্প সময়ে নিরাপত্তা ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাদের জন্য আধুনিক শিক্ষা কৌশল হিসেবে সমাদৃত হয়েছে। সার্কভুক্ত দেশসমূহের দু'শতাধিক কোটি মানুষের মধ্যে ড. ইউরীই প্রথম ও একমাত্র ব্যক্তি যিনি বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ‘ওয়ার্ল্ড মার্শাল আর্ট হল অব ফেইম' পদক লাভ করে- গ্র্যান্ড মাস্টার অব দ্য ইয়ার ২০০৭ নির্বাচিত হন। তিনি ‘ন্যাশনাল সিকিউরিটি একাডেমি', আমেরিকা থেকে কমিশন অফিসার্স কোর্স সমাপ্ত করেন। বৃটিশ হোম অফিস অধীনস্ত সিকিউরিটি ইন্ডাস্ট্রি অথরিটি ভিআইপি প্রটেকশনের ওপর সর্বোচ্চ প্রফেশনাল ডিগ্রি অর্জন করেন। বৃটিশ আর্মি রয়েল ইঞ্জিনিয়ার্স-এর অধীনে বিস্ফোরক সার্চ এন্ড রিকগনিশন কোর্সও সম্পন্ন করেন। ফায়ার ট্রেনিং একাডেমি, ইংল্যান্ড থেকে ফায়ার মার্শাল কোর্স সম্পন্ন করেন ও বৃটিশ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীনে তিনি (এভিয়েশন লেভেল-৪) প্রশিক্ষণ শেষে সনদ অর্জন করেন। উল্লেখ্য, ড. ইউরী ইন্টারন্যাশনাল কমব্যাট মার্শাল আর্টস ইউনিয়নের এসোসিয়েশন একজন প্রথিতযশা হিসেবে অনন্য স্বীকৃতি লাভ করে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেন। তিনি এফবিআই, এসএএস, সিআইএ, বৃটিশ আর্মি, লাটভিয়ান, স্পেশাল ফোর্স, আইরিস কারেকশন ডিপার্টমেন্ট ইত্যাদি আন্তঃদেশীয় বিভিন্ন আইনপ্রয়োগকারী ও গোয়েন্দা সংস্থাসমূহের সঙ্গে ক্রস ট্রেনিং-এর পাশাপাশি দেশের সরকারি নিরাপত্তা রক্ষী বাহিনীসমূহের প্রশিক্ষণে নিয়োজিত দেশ-এর প্রথম ও শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান ‘রেঞ্জারস একাডেমি অব সিকিউরিটি এন্ড ডিফেন্স'-এর কমান্ডেন্ট হিসেবে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ), সেনাবাহিনী, নৌ বাহিনী, পুলিশ, কোস্ট গার্ড, বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী, এনএসআই, পুলিশ স্টাফ কলেজ, স্কুল অব মিলিটারি ইন্টিলিজেন্সসহ স্বরাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়স্থ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রশিক্ষাণাদি পরিচালনার দায়িত্ব পালন করে আসছেন। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী কর্তৃক ব্যবহৃত সিকিউরিটি ব্যাটন ড. ইউরীই উদ্ভাবন করেন। এছাড়া, ড. ইউরী ইন্টারন্যাশনাল বডি গার্ড এসোসিয়েশন, ইন্টারন্যাশনাল পুলিশ ট্যাকটিস ট্রেইনার্স এসোসিয়েশন (আইপিটিটিএ), যুক্তরাজ্যের ল-এনফোর্সমেন্ট ট্রেনিং এজেন্সিজ (আইইএলইটিএ)-এর সার্টিফাইড ইন্সট্রাক্টর, আমেরিকান সোসাইটি ফর ল-এনফোর্সমেন্ট ট্রেইনার্স (এলএলইটি), আমেরিকান সোসাইটি অব ইন্ডাস্ট্রিয়াল সিকিউরিটি (এএসআইএস) ইত্যাদি সংগঠনসমূহেরও তিনি সদস্য।

Source: http://www.dailysangram.com
7 October 2012 
 

No comments:

Post a Comment