Monday, June 18, 2012

সেরেঙ্গেটি মাইগ্রেশন

তানজানিয়ার সেরেঙ্গেটি অঞ্চলের নাম হয়তো কেউ কেউ শুনে থাকবেন। কারণ সেখানকার ওয়াইল্ড লাইফ রিজার্ভেই ঘটে চমকপ্রদ এবং বিস্ময়কর ঘটনা। সেখানে প্রতিবছর প্রায় ২০ লাখ তৃণভোজী প্রাণী পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মাইগ্রেশনে অংশগ্রহণ করে খাবার ও পানির খোঁজে। তার মধ্যে প্রায় দেড় লাখ প্রাণী হল সেরেঙ্গেটির বিখ্যাত ওয়াইল্ড বিস্ট। তানজানিয়ার সেরেঙ্গেটি ওয়াইল্ড লাইফ রিজার্ভ থেকে শুরু করে এরা দক্ষিণ কেনিয়ার মাসাইমারা অঞ্চল হয়ে আবার ফিরে আসে সেরেঙ্গেটিতে। ৫০০ কিলোমিটারের এ পথ তারা অতিক্রম করে এপ্রিল থেকে ডিসেম্বর মাসের মধ্যে।

-তাসমিন

ইগুয়াজু জলপ্রপাত

ইগুয়াজু জলপ্রপাত পৃথিবীতে যত নামকরা জলপ্রপাত আছে তার মধ্যে ইগুয়াজু অন্যতম। এটি দক্ষিণ আমেরিকার ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার সীমান্তে অবস্থিত। তবে আর্জেন্টিনাতেই এই জলপ্রপাতের বেশির ভাগ অংশ রয়েছে। মূলত ইগুয়াজু নদী থেকে জলপ্রপাতটির সৃষ্টি হয়েছে। এই জলপ্রপাত ২৭০টি পৃথক জলপ্রপাতের সমষ্টি, যা প্রায় ২.৭ কিলোমিটার (১.১৬৭ মাইল) এলাকাজুড়ে বিস্তৃত। এসব জলপ্রপাত ভূমি থেকে কোনো কোনোটির উচ্চতা প্রায় ৮২ মিটার (২৬৯ ফুট), তবে অধিকাংশই প্রায় ৬৪ মিটার (২১০ ফুট) উচ্চতাবিশিষ্ট। জলপ্রপাতগুলোর মধ্যে বেশি পরিচিত বা বিখ্যাতটির নাম 'দ্য গারগানটা ডেল ডিয়াবেলো' বা শয়তানের বালা। এটি ইউ আকৃতির এবং ১৫০ মিটার প্রশস্ত ও ৭০০ মিটার লম্বা। আর্জেন্টিনার ইগুয়াজু ন্যাশনাল পার্ক এবং ব্রাজিলের ইজুয়াকু ন্যাশনালপার্ক এই জলপ্রপাতের দেখাশোনা করে। এ দুটি পার্কই ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে স্বীকৃত। প্রতি বছর হাজার হাজার দর্শক দূরদূরান্ত থেকে এই জলপ্রপাত দেখতে এখানে ছুটে আসেন।

এই জলপ্রপাত নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে একটা লোককথা প্রচলিত আছে। ঈশ্বর নাকি একবার নেপি নামের এক সুন্দরী নারীর প্রেমে পড়ে বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু অনেক আগেই নেপি মন দিয়ে বসে আছে প্রেমিক টারবোকে। তারা নৌকায় পালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। বিষয়টি জানতে পেরে ঈশ্বর রেগে একটি নদী খনন করেন ও এর সামনে তৈরি করেন এই জলপ্রপাত। এই পথ দিয়ে পালানোর সময় মারা যায় নেপি ও টারবো। ইগুয়াজু জলপ্রপাতটির সৃষ্টি ইগুয়াজু নদী থেকে। পড়েছে ব্রাাজিল ও আর্জেন্টিনার সীমান্তবর্তী এলাকায়। জলপ্রপাতের সিংহভাগই ব্রাজিলে। এর উচ্চতা প্রায় ৬০-৮০ মিটার (২০০-২৬৯ ফুট)। দৈর্ঘ্যে ২ দশমিক ৭ কিলোমিটার (১ দশমিক ৭ মাইল)। এখানে প্রতি সেকেন্ডে প্রায় এক হাজার ৭৫৬ ঘনমিটার পানি ওপর থেকে নিচে পড়ছে। ইগুয়াজু শব্দটার অর্থ এসেছে 'টুপি' শব্দ থেকে। যার অর্থ পানি। নদীটির সামান্য কিছু অংশ পড়েছে প্যারাগুয়ের সীমান্তে। ফলে তিন দেশেরই প্রচুর পর্যটক ভিড় করে। ইউনেসকো ১৯৮৪ সালে আর্জেন্টিনা ও ১৯৮৭ সালে ব্রাজিলের অংশকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। 

Sunday, June 17, 2012

বাঙালির ‘নেতিবাচক’ চিন্তার বলি সুন্দরবন

বাঙালির ‘নেতিবাচক’ চিন্তার বলি সুন্দরবন

by


ঢাকার শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করেছেন এমন মানুষের সংখ্যা গত কয়েকবছরে হুড়হুড়িয়ে বেড়েছে৷ আমার গৃহিনী মাও একদিন আমাকে ফোন করে বলেছিলেন, ‘শুনেছিস, তোর অমুক আত্মীয় শেয়ার বাজারে টাকা খাটিয়ে বেশ লাভ করেছে’৷ আমি বলি, ‘ভালো কথা, তবে তাঁর সতর্ক হওয়া উচিত৷ কারণ শেয়ারবাজার বড়ই নড়বড়ে’৷

ঢাকার শেয়ারবাজার একটি বড় ক্ষেত্র৷ সেখানে অর্থলগ্নির পরিমাণও বেশ বড়৷ গত কয়েকবছরে শেয়ারবাজারে একাধিকবার বড় ধরনের দরপতন হয়েছে৷ অনেকে সর্বশান্ত হয়েছেন৷ সবাই জানে, নির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তি শেয়ার বাজার নিয়ে খেলছে৷ সুযোগবুঝে বাজার থেকে সব পয়সা তুলে নিচ্ছে৷ সরকার তাদের খেলা থামাতে ব্যর্থ৷ তবুও কী শেয়ার বাজারে সাধারনের বিনিয়োগ বন্ধ হচ্ছে?

শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ বন্ধ না হওয়ার পেছনে একটা ইতিবাচক চিন্তা কাজ করে৷ অর্থ খোয়ানো মানুষগুলোর মধ্যে সম্ভবত আশা জাগছে, পরেরবার নিশ্চয়ই লাভ করা যাবে৷ দেখিনা আরেকবার চেষ্টা করে৷ শেয়ারবাজারের ক্ষেত্রে বড়, মুনাফাও বেশি৷ ইতিবাচক চিন্তাও বেশি৷

নাজমুল নয়ন নামের একজন বাংলা ব্লগারের একটি কথা আমার খুব পছন্দ হয়েছে, ‘‘আমারা চিন্তা করি বেশি কথা বলি বেশী কাজ করি কম, সামনে দিয়া শত শত হাতি গেলেও ভয়ে থামাই না, পেছন দিয়ে মশা গেলেই কাম সারছে…”৷

এখানে ‘হাতি’কে আমি শেয়ারবাজারের বড় খেলুড়েদের সঙ্গে তুলনা করতে পারি৷ আর ‘মশা’ হচ্ছে প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্য নির্বাচন প্রক্রিয়া৷ এই প্রক্রিয়া নিয়ে কয়েকবছর আগে বাংলাদেশে সম্ভবত প্রথম আলোচনা শুরু করেন পল্লব মোহাইমেন (যতদূর মনে পড়ে, তিনিই প্রথম সাংবাদিক, যিনি এই প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানের সম্ভাব্যতা তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন)৷

শুরুর দিকে এই প্রক্রিয়ায় সুন্দরবন এবং কক্সবাজার ভালোভাবেই জায়গা করে নিয়েছিল৷ অনলাইন ভোট চলছে, জাতীয় দৈনিকগুলোর প্রযুক্তি পাতা ছাড়িয়ে মূল পাতায় সেই খবর প্রকাশ হতে শুরু করেছে৷ সবমিলিয়ে একটা জমজমাট ভাব৷

কিন্তু চলতি বছরে কিছু মানুষের মনে ‘নেতিবাচক’ চিন্তার উদ্রেক হল৷ দুই টাকা খরচ করে এসএমএস ভোট প্রদানে তারা বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য খুঁজে পেল৷ শুরু হল ‘মশা’ নিধনের প্রক্রিয়া৷ আমাদের স্বজাতির একটি অংশ কামান নিয়ে নেমে পড়ল এই কাজে৷

তাদের নিধন প্রক্রিয়ায় এক বড় সমর্থন ছিল মালদ্বীপ৷ জানা গেল, সেদেশ এই প্রতিযোগিতা থেকে নিজেদের প্রত্যাহারের ঘোষণা করেছে৷ প্রশ্ন উঠল, মালদ্বীপ যেখানে প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্য নির্বাচন প্রক্রিয়া থেকে সরে গেছে, আমরা কেন সেখানে থাকবো? সাদা মনে অনেকেই ভেবেছেন, মালদ্বীপকেই আমাদের অনুসরন করা উচিত৷ কিন্তু কেন অনুসরন করা উচিত বা উচিত নয়, সেটা কী আমরা বিবেচনায় এনেছি?

প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্য নির্বাচন থেকে আমাদের পর্যটন খাতে বড় লাভ হতে পারত৷ বিশ্বের নানা দেশের পর্যটকরা আমাদের সুন্দরবন দেখতে বাংলাদেশ ভ্রমণে উৎসাহী হতে পারতেন৷ বাংলাদেশ যে শুধু বন্যা আর পানির দেশ নয়, সেটাও মানুষ জানত৷

পর্যটনের এই দিকটা বিবেচনা করলে মালদ্বীপের অবস্থা কিন্তু পুরোই ভিন্ন৷ বিশ্বের তাবত পর্যটকের কাছে ইতিমধ্যে একটি প্রতিষ্ঠিত দেশ মালদ্বীপ৷ ভারত মহাসাগরের এই দেশটিতে পর্যটকের ভিড় লেগে থাকে সবসময়৷ যেকারণে সেদেশের মানুষের মাথাপিছু গড় আয় বাংলাদেশি টাকায় চল্লিশ হাজার টাকা!

এক্ষেত্রে আমাদের অবস্থান কী, বছরে কতজন বিদেশি পর্যটক সুন্দরবন দেখতে আসেন? আমাদের দেশে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন আর সমুদ্রতট অবস্থিত, কতজন মানুষ সেটা জানেন? পর্যটন খাত থেকে আমাদের আয়ই বা কেমন? মালদ্বীপের সঙ্গে এসবের তুলনা কী আমাদের চলে?

পাঠক আপনি নিজেই ভাবুন এসব প্রশ্নের উত্তর৷ আমার কাছে এসব প্রশ্নের উত্তরে একটা কথাই বলার আছে, মালদ্বীপের পর্যটন খাতের সঙ্গে আমাদের তুলনা চলে না৷ এক্ষেত্রে সেদেশ আমাদের চেয়ে অনেক উপরে উঠে গেছে৷ তাই, তাদের হয়ত নতুন করে সপ্তাশ্চর্যে নাম লেখানোর প্রয়োজন নেই, কিন্তু আমাদের আছে৷ বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ যদি গড়ে দুই বা দশটাকা খরচ করে সেই প্রয়োজন মেটাতো, তাতে লাভ আমাদেরই হত৷ কিন্তু প্রতিযোগিতার একপর্যায়ে এসে আমরা ‘মশা’ নিধনে আগ্রহী হলাম, ভোট হারাতে শুরু করল সুন্দরবন৷

এই প্রতিযোগিতার আয়োজক সংস্থা নিউ সেভেন ওয়ান্ডার্সের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে আমাদের মধ্যে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল৷ দৈনিক প্রথম আলোয় আনিসুল হক সেটার একটি চমৎকার ব্যাখ্যা দিয়েছেন৷ আমার কাছে সেই ব্যাখ্যা গ্রহণযোগ্য মনে হয়েছে৷ একটি বিষয় এখানে আমাদের বিবেচনা করা উচিত৷ প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্য নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আলোচনা হয়েছে, আমরা দ্বিধাদ্বন্দ্বে থাকলেও আর্জেন্টিনা, ভিয়েতনাম, দক্ষিণ আফ্রিকাসহ অনেক দেশ এই সুযোগ লুফে নিয়েছে৷ এখানে আমাদের দেশের একটা পরোক্ষ ব্র্যান্ডিং হয়েছে৷ এসব দেশের ভোটাররা, পর্যটকরা ঘুরে ফিরে সুন্দরবনের নাম শুনেছেন, সুন্দরবনের বদৌলতে বাংলাদেশ সম্পর্কে জেনেছেন৷ আমরা হেরে গেলেও এই লাভটুকু হয়েছে ঠিকই৷ কিন্তু জিতে গেলে সেটা আরও অনেক দূরে প্রসারিত হত৷ যখন এই প্রতিবেদনটি লিখছি, তখন গুগল নিউজে এই বিষয়ে কয়েক হাজার প্রতিবেদন শোভা পাচ্ছে, সেখানে ঘুরেফিরে আসছে আমাজন (দক্ষিণ আমেরিকা), হ্যালং বে (ভিয়েতনাম), ইগুয়াজু জলপ্রপাত (আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিল), জেজু দ্বীপ (দক্ষিণ কোরিয়া), কোমোডো জাতীয় উদ্যান (ইন্দোনেশিয়া), পুয়ের্তো প্রিন্সেসা আন্ডারগ্রাউন্ড রিভার (ফিলিপাইনস), টেবিল মাউন্টেন (দক্ষিণ আফ্রিকা) এর নাম৷ নেই সুন্দরবন (বাংলাদেশ, ভারত) নামটি৷

২০০৪ সালে ভিয়েতনামের হ্যালং বে ভ্রমণের সুযোগ হয়েছিল আমার৷ এককথায় বলব আমার জীবনের অন্যতম স্মরণীয় ভ্রমণ সেটি৷ সত্যিই হ্যালং বে এই তালিকায় আসার সকল যোগ্যতা রাখে৷ অন্যান্য স্থানগুলোর ছবি দেখেও সন্তুষ্ট আমি৷ বিতর্কিত বা কারো মতে আন্তর্জাতিকভাবে অগ্রহণযোগ্য একটি সংগঠনের নির্বাচিত সাত সৌন্দর্য নিয়ে বিতর্কের কোন সুযোগ নেই৷

বাঙালি হিসেবে আমরা ব্যক্তিস্বার্থকে বড় করে দেখি৷ এতে অপরাধের কিছু নেই৷ কিন্তু জাতি হিসেবে ঐক্যবদ্ধ হওয়াটাও বড় জরুরি৷ ব্যক্তিস্বার্থে ‘হাতি’র ধ্বংসযজ্ঞ থামানো যেমন প্রয়োজন, তেমনি জাতীয় স্বার্থে ‘মশা’কে সমর্থনের ইতিবাচক মনোভাবও দরকার৷ নতুবা আমাদের সামগ্রিক উন্নয়ন কখনোই হবে না৷ বায়ান্ন, একাত্তরের সেই ঐক্যবদ্ধ জাতি কী আমরা আর কখনোই পাবোনা?


Source: n-rb.com/2011/11/12/বাঙালি-সুন্দরবন/

পৃথিবীর প্রাকৃতিক সপ্তাচর্য

পৃথিবীর প্রাকৃতিক সপ্তাচর্য
উজ্জ্বল দত্ত
পৃথিবী জুড়ে প্রাকৃতিক পর্যটন স্থানগুলো নিয়ে প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্য নির্বাচন সম্পন্ন হয়ে গেল। বিশ্বের প্রায় আড়াই হাজার পর্যটন এলাকা নির্বাচনের ভিত্তিতে ধারাবাহিকভাবে এই প্রতিযোগীতায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। তার মধ্য থেকে প্রাপ্ত সমর্থনের সংখ্যার ভিত্তিতে গত ২৮ জুলাই ২০১১ প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্য ফাউন্ডেশন ২৮টি পর্যটন এলাকাকে চুড়ান্তভাবে ঘোষণা করে। সর্বশেষ সাতটি এলাকা সপ্তাশ্চর্য তালিকায় স্থান পায়। এতে প্রথম স্থানে রয়েছে ব্রাজিলের ‘ইগুয়াজু জলপ্রপাত’, দ্বিতীয় স্থানে দক্ষিণ কোরিয়ার স্বায়ত্তশাসিত দ্বীপ প্রদেশ ‘জেজু আইল্যান্ড’,তৃতীয় স্থানে দক্ষিণ আমেরিকার কয়েকটি দেশস্থিত আমাজন বন, চতুর্থ স্থানে ভিয়েতনামের ‘হা লং উপসাগরীয় উপকূল’, পঞ্চম স্থানে রয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার‘টেবল মাউন্টেইন’, ষষ্ঠস্থান লাভ করেছে ফিলিপাইন দ্বীপপুঞ্জের‘পুয়ের্তো-প্রিনচেসা সাবটারেনিয়ান নদী’ এবং সপ্তম স্থান অর্জন করেছে ইন্দোনেশিয়ার ‘কমোডো ড্রাগন আইল্যান্ড’। পুয়ের্তো-প্রিন্সেসা পাতাল নদী জাতীয় উদ্যান পুয়ের্তো-প্রিন্সেসা পাতাল নদী জাতীয় উদ্যান ফিলিপাইনে। পুয়ের্তো প্রিন্সেসা,পালওয়ান ও ফিলিপাইন সিটির কেন্দ্র থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার উত্তরে এর অবস্থান। দ্বীপের উত্তর উপকূলে সেন্ট পল পর্বতে জাতীয় উদ্যান। এই বন উত্তরের সেন্ট পল উপসাগর থেকে পূর্বের ‘বেবুয়ান’ নদী পর্যন্ত বিস্তৃত। পুয়ের্তো প্রিন্সেসা সরকার ১৯৯২ সাল থেকে জাতীয় উদ্যানটির দায়িত্ব নিয়েছেন। পুয়ের্তো প্রিন্সেসা পাতাল নদীটি সেন্ট পল পাতাল নদী নামেও পরিচিত। সাবাং শহর থেকে একটি উঁচু পথ বেয়ে এই পাতাল নদীতে যেতে হয়। ৮.২ কিলোমিটার দীর্ঘ ভ্রমনযোগ্য এই নদীটিও জাতীয় উদ্যানের অন্তর্ভূক্ত। পশ্চিম ফিলিপাইন সাগরের নোনা বাতাস নদী প্রবেশের গুহামুখ বেয়ে নদীতে প্রবাহিত হয়; এই বৈচিত্র্য নদীটিকে স্বাতন্ত্র্য এনে দিয়েছে। পুয়ের্তো-প্রিন্সেসা নদীর উপরিদেশ এবং তলদেশে চুনাপাথরের বেশ কিছু লম্বালম্বি স্তম্ভ (স্ট্যালেগটাইট ও স্ট্যালেগমাইট) রয়েছে। সুদীর্ঘ সময় ধরে জলধারা নিঃসৃত হওয়ার ফলে ভূঅভ্যন্তরস্থ চাপে গলিত চুন বাইরে বেরিয়ে স্তম্ভের আকার ধারন করেছে। নদীর তলদেশে এই প্রক্রিয়া এখনও চলছে। ২০০৭ সাল পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যে, মেক্সিকোর ‘ইউকাতান পেনিনসুলা’ এবং ফিলিপাইনের ‘পুয়ের্তো প্রিন্সেসা’ পাতাল নদী আবিস্কারের কথা জানা যায়। পুয়ের্তো-প্রিন্সেসা পৃথিবীর সর্বদীর্ঘ পাতাল নদী। এশিয়ার অনেক গুরুত্বপূর্ন অরণ্যের জীববৈচিত্র্য এবং পর্বত আর সামুদ্রিক ইকোসিস্টেমের একটি পুর্নাঙ্গ বৈশিষ্ট্য এই পাতাল নদী এবং জাতীয় উদ্যানে বিদ্যমান। গবেষকরা এই বনে প্রায় ৮শ প্রজাতির উদ্ভিদের সন্ধান পেয়েছেন। এদের মধ্যে কমপক্ষে ২৯৫ প্রজাতির বৃক্ষ রয়েছে যারা পরগাছা গোত্রের উদ্ভিদ দ্বারা প্রভাবিত। নিম্নভূমির নাতিশীতোষ্ণ অরণ্যে বৃহৎ বৃক্ষের মধ্যে দাউ,আইপিল,দিটা,এ্যামুগিস এবং আপিটং উল্লেখযোগ্য। উপকূলীয় বনভূমিতে বিটাওগ,পনজামিয়া পিনাটা, ইরিনথিয়া ওয়েরিয়েনটালিস,এ্যালমেসিগা,কামাগং, পানদান এনিবং এবং রাত্তানসহ নাতিশীতোষ্ণ অরণ্যের বৃক্ষগুলোও জন্মে। এই উদ্যানে অনেক প্রজাতির পাখির বিচরণ দেখা যায়। পালাওয়ান সীমানায় ২৫২ প্রজাতির পাখির বাস । বনে এরা ছাড়াও ১৬৫ প্রজাতির পাখি বাস করে। পার্কের ৬৭ শতাংশ পাখিই পালাওয়ান বনের। সংক্রামক রোগবাহী পাখিদের ১৫টি প্রজাতিই পালাওয়ানের। নীল গলা টিয়া, শক্ত,খাড়া পালকওয়ালা টেবন পাখি,পাহাড়ী ময়না,পালাওয়ানী ধনেশ পাখি ও শ্বেত বক্ষের সামুদ্রিক ঈগল এই বনের উল্লেখযোগ্য পাখি। প্রায় ৩০ প্রজাতির স্তন্যপায়ীর বসবাস লক্ষ্য করা যায়। জোয়ারের সময় বনের আকাশে এবং সৈকতে বাচ্চাদের খাবার সংগ্রহের জন্য লম্বা লেজওয়ালা ম্যাকাকা দেখা যায়। পাখি গোত্রে এরাই সর্বোচ্চ শ্রেণীর স্তন্যপায়ী। অন্য স্তন্যপায়ীর মধ্যে গোঁফওয়ালা শুকর,পশমি বিড়াল,পালওয়ানী গন্ধব্যাজার এবং পালওয়ানী সজারু উল্লেখযোগ্য। এ পর্যন্ত ১৯ প্রজাতির সরীসৃপ আবিস্কৃত হয়েছে,তন্মধ্যে ৮টি প্রজাতি রোগবাহী। মাংসাশী শিকারী মধ্যে ডোরাকাটা পাইথন(অজগর),বহুরূপী গিরগিটি এবং সবুজ রঙা টিকটিকির দেখা পাওয়া যায়। উভচরের মধ্যে এই অঞ্চলে ১০টি প্রজাতির বিচরণ চোখে পড়ে। ফিলিপাইন উডল্যান্ড ব্যাঙ তুলনামুলক এই বনের সবচেয়ে দ্রুতগামী প্রাণী। বারবোরশুলা নামের প্রাণীটি একমাত্র পালওয়ান অঞ্চলে দেখা যায়। তাছাড়া গুহাগুলোতে ৯ প্রজাতির বাঁদুর এবং ২ প্রজাতির দ্রুত ও বিষাক্ত মাকড়সা বাস করে। পার্কের উপকূলীয় অঞ্চলে সমুদ্রগাভী নামে পরিচিত সীল এবং হক্সবিল কচ্ছপের বিচরণ দেখা যায়।
উইকিপিডিয়া অবলম্বনে

১০ ই জুন ২০১২

Source:
www.dainikazadi.org

একাধিক ভাষা মস্তিষ্কের শক্তি বাড়ায়

একাধিক ভাষা মস্তিষ্কের শক্তি বাড়ায়

ভাব প্রকাশের জন্য ভাষা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আর মাতৃভাষায় ভাব প্রকাশ করতে পারার মতো আনন্দ ও গর্ব অন্য ভাষায় নেই। কিন্তু বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে মাতৃভাষার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক ভাষার দক্ষতা অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। তাতে অবশ্য দুই দিক থেকেই লাভ যোগ হতে পারে। কর্মপরিধি বাড়ার পাশাপাশি মানুষের মস্তিষ্কের শক্তিও নাকি বেড়ে যায়- বিজ্ঞানীরা এমন কথাই শুনিয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির একদল বিজ্ঞানী এ নিয়ে গবেষণা করেন। সম্প্রতি ওই গবেষণা শেষে তাঁরা জানিয়েছেন, মাতৃভাষার পাশাপাশি অন্য একটি ভাষা শিক্ষার মাধ্যমে মানুষের মস্তিষ্কের শক্তি বেড়ে যেতে পারে। তাঁদের মতে, জোড়া ভাষার দক্ষতা মস্তিষ্কের প্রশিক্ষণের মতো। এটি এমন এক মানসিক শক্তি, যা মনকে প্রফুল্ল রাখে।

গবেষণার ফল উল্লেখ করে বিজ্ঞানীরা জানান, প্রাঞ্জলভাবে দু'টি ভাষা বললে মস্তিষ্কে এর প্রভাব পড়ে। এতে শব্দের প্রতি ব্যক্তির স্নায়ুবিক ব্যবস্থায় সাড়া দেওয়ার প্রক্রিয়া পরিবর্তন হয়।

গবেষণার জন্য বিজ্ঞানীরা স্বেচ্ছাসেবী ৪৮ জন স্বাস্থ্যবান শিক্ষার্থীর মস্তিষ্কের সাড়া প্রদান প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করেন। এর মধ্যে ২৩ জন ছিলেন দু'টি ভাষায় কথা বলায় দক্ষ। বৈদ্যুতিক প্রবাহ নির্ণয় করতে সক্ষম একটি ব্যবস্থার মাধ্যমে বিভিন্ন শব্দের প্রতি তাদের মস্তিষ্কের সাড়া প্রদান প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করা হয়। এতে দেখা যায়, শান্ত পরিস্থিতিতে সবার মস্তিষ্ক একই ধরনের সাড়া দেয়। কিন্তু কোলাহলপূর্ণ পরিবেশে জোড়া ভাষায় দক্ষ শিক্ষার্থীরা শব্দের প্রতি ভালোভাবে সাড়া দিতে পেরেছেন। সূত্র : বিবিসি অনলাইন।

নিউটনের ধাঁধার উত্তর মিললো ৩৫০ বছর পর

নিউটনের ধাঁধার উত্তর মিললো ৩৫০ বছর পর

প্রখ্যাত ইংরেজ পদার্থবিজ্ঞানী, গণিতবিদ, জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও অ্যালকেমিস্ট স্যার আইজ্যাক নিউটন (১৬৪৩-১৭২৭) প্রায় ৩৫০ বছর আগে বস্তুর গতিসম্পর্কিত দুটি প্রশ্ন রেখেছিলেন। সেই থেকে প্রশ্ন দুটি বিজ্ঞানীদের ধাঁধায় রেখেছিল। কিন্তু এবার সেই জটিল ধাঁধার ঘোর কাটল! আর এ কাজটি করল মাত্র ১৬ বছর বয়সী ভারতীয় কিশোর শৌর্য রায়। বাবার চাকরি সূত্রে বেশ কয়েক বছর ধরে জার্মানিতে বাস করছে তারা।

বিশ্ববাসীর কাছে নিউটনের করা প্রশ্ন দুটি প্রায় ৩৫০ বছর ধরে দুর্বোধ্যই ছিল। নিউটনের প্রশ্ন ছিল পৃথিবীর ওপর থেকে কোনো ঢিল যদি সামনের দিকে পৃথিবীর সঙ্গে সমান্তরালে ছোড়া হয়, কিছুক্ষণ পর ঢিলটি অভিকর্ষের টানে মাটিতে নেমে আসে। তবে ঢিলটির ওপর যে শক্তি (বল) প্রয়োগ করা হয়েছে তার ওপরে অভিকর্ষের টান, দুটি মিলিয়ে একটি মিশ্র বল (লব্ধি) তৈরি হয়। যার প্রভাবে কিছুটা বাঁকা পথে মাটিতে এসে পড়ে বস্তুটি। আগের থেকে আরো জোরে ঢিল ছুড়লে সে আগের থেকে আরো দূরে গিয়ে মাটিতে পড়ে। কিন্তু ঠিক কোন গতিতে ওই ঢিলটা ছোঁড়া হলে সে পৃথিবীতে গোলভাবে পাক খেয়ে একদম ঠিক সেই জায়গায় এসেই মাটিতে পড়বে, ঠিক যেখান থেকে তাকে ছোঁড়া হয়েছিল এবং মাটিতে ধাক্কা খেয়েই বা সে কোন দিকে লাফাবে?

এ প্রশ্নের উত্তর সন্ধানে অনেক ঘাম ঝরিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। কিন্তু সঠিক সমাধান বের করতে পারেননি। কয়েক বছর আগে উন্নত কম্পিউটারের সাহায্যে এ প্রশ্নের উত্তর পাওয়া গেলেও সেটিও ছিল বেশ জটিল আর গোলমেলে। কিন্তু এবার খুব সহজে নিজের হাতে অঙ্ক কষে নিউটনের প্রশ্নের উত্তর বের করে বিশ্বের বিজ্ঞানীদের অবাক করে দিয়েছে স্কুলছাত্র শৌর্য। শুধু তাই নয়, তার কষা অঙ্কের পদ্ধতিতে কোনো বল ছুড়লে সহজেই হিসাব করা যাবে বলটির গতিপথও।

জার্মানির ড্রেসডেন শহরে বাস করে শৌর্য। পড়ছে ড্রেসডেনের একটি স্কুলে। চার বছর আগে পরিবারের সঙ্গে কলকাতা থেকে জার্মানিতে গিয়েছে সে। শৌর্য গণমাধ্যমকে বলেছে, জার্মান ভাষা জানা না থাকায় প্রথমে তার বেশ অসুবিধে হয়েছে। তবে এখন সে অনায়াসে জার্মান ভাষা বলতে পারে। এক দিন স্কুল থেকে ড্রেসডেন বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল শৌর্যদের। সেখানে নিউটনের বিষয়ে বলতে গিয়ে এক অধ্যাপক নাকি শৌর্যদের কাছে দাবি করেন, কোনো মানুষের পক্ষে নিউটনের ওই দুটি প্রশ্নের উত্তর বের করা সম্ভব নয়। কিন্তু অধ্যাপকের এ দাবি মেনে নিতে পারেনি শৌর্য। তাই সেই প্রশ্ন দুটির উত্তর বের করতে অঙ্ক কষতে লেগে যায়।

শৌর্য গণমাধ্যমকে বলেছে, ‘আমার মনে প্রশ্ন জেগেছিল, কেন কেউ নিউটনের সেই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে না? সব কিছুরই তো উত্তর খুঁজে পাওয়া সম্ভব।'

শৌর্যের এ সাফল্যের খবরে বিশ্বের গণিত ও পদার্থবিজ্ঞানের অঙ্গনে বেশ হৈচৈ শুরু হয়েছে। তবে নিজেকে এতটা কৃতিত্ব দিতে নারাজ শৌর্য। তার মতে, সে প্রতিভাবান নয়। বরং স্কুলে যদি সে আরো একটু ভালো করে ফুটবল খেলতে পারত, তা হলে অনেক বেশি খুশি হতো। শৌর্যের মেধাগুণে মুগ্ধ হয়ে স্কুলের শিক্ষকরা তাকে সমবয়সীদের চেয়ে দুই ক্লাস ওপরে ভর্তি করিয়েছেন। শিগগিরই পরীক্ষা শেষে কলেজে ভর্তি হবে শৌর্য। ্য

ইন্টারনেট

অদ্ভূত গিরিখাত দ্য গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন

অদ্ভূত গিরিখাত দ্য গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন

এম এস শহিদ : পাহাড়ের গায়ের ফাটলকে গিরিখাত বলা হয়। তবে এ ফাটল ছোটখাটো নয়, বিশাল বিশাল ফাটল। এতোই বিশাল যে, কিছু কিছু জায়গায় এসব ফাটল এক মাইল পর্যন্ত চওড়া হয়ে থাকে। তবে এসব ফাটল কিন্তু একদিনে সৃষ্টি হয়নি। কোটি কোটি বৎসর ধরে ধীরে ধীরে তৈরি হয় এসব ফাটল। যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্যে অবস্থিত এমনই একটি অদ্ভূত গিরিখাতের না দ্য গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন। ভূতত্ত্ববিদদের মতে, এটি প্রায় ১ কোটি ৭০ লাখ বছরের পুরনো। গ্র্যান্ড ক্যারিয়ন লম্বায় প্রায় ৪৪৬ কিলোমিটার এবং কিছু কিছু জায়গায় এ গিরিখাত প্রায় ১ কিলোমিটার পর্যন্ত চওড়া। সবচেয়ে অবাক ব্যাপার হচ্ছে, এ গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের গভীরতা প্রায় ৬০০০ ফুট বা ১৮০০ মিটার। বিশাল এ গিরিখাতের মধ্যদিয়ে কলোরাডো নামে একটি নদী বয়ে গেছে। গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের বেশিরভাগই ‘গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন ন্যাশনাল পার্ক' এর মধ্যে পড়েছে। আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট থিওডোর রুজভেন্ট এ গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের উন্নয়ন ও সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে গেছেন। পৃথিবীর ভৌগলিক পরিবর্তনের কারণেই এ সুবিশাল গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন তৈরি হয়েছে। তবে একদিনে কিন্তু গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন তৈরি হয়নি। এর বর্তমান অবস্থায় আসতে বহু বছর লেগে গেছে। তবে কতো বছর আগে গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন তৈরি হতে শুরু করেছিলো সে সম্পর্কে কিন্তু ভূতত্ত্ববিদরা এখনো একমত হতে পারেননি। তবে কিছু কিছু তথ্য ও প্রমাণের ভিত্তিতে ধারণা করা হয় আজ থেকে প্রায় ১৭ মিলিয়ন বছর আগে সৃষ্টি হয়েছিলো গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন।

শুরুতে গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের চেহারাও বর্তমানের মতো ছিল না এবং সেসময় গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের মধ্যে দিয়ে কলোরাডো নদী প্রবাহিত হতো। আর তখন এ নদীর অকেগুলো শাখা প্রশাখাও ছিলো। ধীরে ধীরে এসব নদীর তীরে পলি জমল। সেই পলিমাটি ক্রমে ক্রমে কঠিন হয়ে পরিণত হলো পাথরে। আর এসব পাথরই এক সময় নদীর গতিপথ পাল্টে দিলো। আবার এসব পাথর নদীর স্রোতেই ক্ষয় হয়ে নতুন নদীপথ তৈরি হচ্ছে। পৃথিবীর গিরিখাতগুলোর মধ্যে গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন সবচেয়ে বিখ্যাত। তবে এটি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় গিরিখাত কিংবা গভীর গিরিখাতও নয়। নেপালের ‘কালি গন্দকি জর্জ' নামক গিরিখাতটি আরো গভীর। আর অস্ট্রেলিয়ার ‘ক্যাপারটি ভ্যালি' গিরিখাতটি গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের চেয়েও প্রায় এক কিলোমিটার লম্বা ও চওড়া। তবে গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন গিরিখাতটি বিখ্যাত হওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। এর বিশালত্ব, নান্দনিক দৃশ্য, দুর্গম অঞ্চল আর বিচিত্র রংয়ের পাথরে গড়া পাহাড়ের সমাবেশেই ভ্রমণ পিপাসু মানুষকে কাছে টেনে নেয়। গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের বড় বড় পাথরগুলো সুন্দরভাবে সাজানো, যা দেখলে যে কেউই মুগ্ধ হতে বাধ্য। গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের পাথরগুলো স্তরে স্তরে সজ্জিত। একেকটা স্তরকে বলা হয় প্লেট। কলোরাডো নদী থেকে উৎপন্ন বলে এখানকার প্লেটগুলোকে কলোরাডো প্লেট বলা হয়। লাখ লাখ বছর সময় লেগেছে এ প্লেটগুলো তৈরি হতে। বেশিরভাগ ভূতত্ত্ববিদ মনে করেন প্রায় ১৭ মিলিয়ন বছর আগে এসব প্লেট তৈরি হয়। তবে এগুলো আরো আগের বলে অনেকেই মনে করেন। তাদের মতে, পাথরের এসব প্লেট তৈরি হতে প্রায় ৪০ মিলিয়ন বা ৪ কোটি বছর লেগেছিলো। গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের সবচেয়ে নিচের স্তর সৃষ্টি হয় প্রায় ৬ কোটি বছর আগে। এ স্তর শীর্ষ থেকে প্রায় ৫ থেকে ১০ হাজার ফুট নিচে অবস্থিত। গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের পাথরের স্তরগুলোর মধ্যে নিচের স্তরটি সবার আগে তৈরি হয়েছিলো। এরপর এ স্তর ধীরে ধীরে খাড়া ওপরে উঠে যেতে থাকে। তৈরি করতে থাকে পাথরের নতুন নতুন স্তর। আবার কলোরাডো ও তার শাখা-প্রশাখাগুলো ছিল ভীষণ খরস্রোতা, এদের স্রোতের কারণে পাথর ক্ষয় হয়ে নদীর নতুন গতিপথ সৃষ্টি হতে লাগলো এবং সেইসাথে ক্ষয়ে যাওয়া সেসব পাথর থেকে নতুন নতুন স্তরও সৃষ্টি হতে লাগলো। এরপর বরফের যুগ। বরফ যুগের পরে বরফ গলে নদীতে পানির পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার সাথে সাথে স্রোতও বেড়ে গেলো। এ স্রোতের কারণে পাথরের স্তর আরো দ্রুতগতিতে ক্ষয়ে আরো গভীর হয়ে যেতে লাগলো। অতঃপর প্রায় ৫৩ লাখ বছর আগে কলোরাডো নদীর একেবারে নিচের স্তর তৈরি হয়। ভিত্তি তৈরি হয়ে যাওয়ার ফলে কলোরাডোর স্রোত এর চারপাশের পাথরগুলোকে আরো বেশি ক্ষয় করতে থাকে।

এভাবে ক্ষয় হতে হতে এ নদী আজকের অবস্থায় এসে পৌঁছেছে। গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের কলোরাডো নদীর চারপাশের দেয়ালে পাথরের যে স্তরগুলো দেখতে পাওয়া যায় সেগুলোও একরমক ক্ষয় হয়েই সৃষ্টি হয়েছে। আর বর্তামন কলোরাডো নদীর যে গভীরতা সেটিও প্রায় ১২ লাখ বছর আগে হয়েছিলো। এরপর ৩০ থেকে ১ লাখ বছর আগের সময়ের মধ্যে পৃথিবীর আগ্নেয়গিরিগুলোতে ঘন ঘন অগ্ন্যুৎপাত হতো এবং এর ফলে গ্র্যান্ড ক্যানিয়নে ঘটলো আরো পরিবর্তন। আগ্নেয়গিরির লাভা আর ছাই এসে জমা হতে লাগলো কলোরাডো নদীর তলদেশে আর এর আশপাশের এলাকায়। বছরের পর বছর এসব ছাই আর লাভা জমা হয়ে সেগুলো ক্রমে ক্রমে জমে রূপান্তরিত হয় পাথরে। এসব লাভা আর ছাই দিয়ে তৈরি হয় গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের সবচেয়ে নতুন পাথরের স্তরগুলো। সমগ্র গ্রা্যন্ড ক্যানিয়ানকে প্রধানত ২টি অঞ্চলে ভাগ করা হয়েছে। নর্থ রিম এবং সাউথ রিম নামে এ ২টি অঞ্চলের ভৌগলিক অবস্থার মধ্যে বেশ পার্থক্য থাকায় এদের মধ্যকার আবহাওয়া ও জলবায়ুর মধ্যে বেশ তারতম্য রয়েছে। সাউথ রিমের চেয়ে নর্থ রিমের স্বাভাবিক তাপমাত্রা কম। কারণ নর্থ রিমের পাহাড়গুলো সাউথ রিমের পাহাড়গুলোর চেয়ে প্রায় ১ হাজার ফুট বেশি উঁচু। আর নর্থ রিমের পাহাড়গুলোর উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে গড়ে প্রায় ৮ হাজার ফুট। কলোরাডো নদীটি উত্তর থেকে দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয়েছে। নদী তার উৎপত্তিস্থল থেকে যতো দূরে যাবে এর স্রোতও ততো হ্রাস পেতে থাকবে। তার মানে দাঁড়াল কলোরাডো নদীর উৎপত্তিস্থল উত্তর দিকে হওয়ায় সেখানে নদীর স্রোতও বেশি। আর স্রোত বেশি হওয়ায় সেখানে নদী আরো বেশি পরিমাণ পাথর ক্ষয় করতে পারে। ফলে আরো বেশি পরিমাণে পলি নদীতে জমে। আর সে কারণেই নর্থ রিমের পাহাড়গুলো সাউথ রিমের পাহাড়গুলোর চেয়ে বেশি উঁচু। তবে গ্রীষ্মকালে ২টি অঞ্চল্পেই প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। তবে গ্র্যান্ড ক্যানিয়নে যেতে হলে গ্রীষ্মকালে যাওয়াই ভালো। কেননা শীতকালে সেখানে প্রচুর বরফ পড়ার কারণে নর্থ রিমের রাস্তাঘাট বন্ধ হয়ে যায়। আর নর্থ রিমে যেতে না পারলে গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের আসল সৌন্দর্যটাই উপভোগ করা যাবে না। শুনে অবাক মনে হলেও সত্যি হলো, দুর্গম পাথরের এ গিরিখাতেও মানুষ বাস করে। যেমন পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধে প্রচন্ড ঠান্ডা আর বরফ থাকা সত্ত্বেও সেখানে এক্সিমোরা বাস করে, তেমন গ্র্যান্ড ক্যানিয়নেও বাস করে এক বিশেষ জাতি। তাদের নাম হচ্ছে ‘পুয়েব্লো'।

এরাই গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের আদি অধিবাসী। ইউরোপীয়ানরা আমেরিকায় পৌঁছার অনেক আগে থেকে তারা এ দুর্গম গিরিখাত অঞ্চলে বসবাস করে আসছে। পুয়েব্লোরাই প্রথম এ অঞ্চলের নাম দেয় অংতুপকা। এটা পুয়েব্লোদের নিজস্ব ভাষার নাম। গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন পুয়েব্লোদের কাছে পবিত্র জায়গা বা তীর্থস্থান নামে পরিচিত। পুয়েব্লো ছাড়াও এখানে ইয়ুমান, হাভাসপাই, ওয়ালাপাই জাতি বাস করে। এদের সবাইকে প্রাচীন ‘কোহোনিনা' জাতির বংশধর বলে মনে করা হয়। ৫০০ থেকে ১২০০ খৃষ্টাব্দ সময়ের মধ্যে গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের পশ্চিম অংশে কোহোনিনারা বাস করতো। এছাড়া ৫০০-১৪৫০ খৃষ্টাব্দের মধ্য সময়ে ‘সিনাগুয়া' নামের একটি জাতি গ্র্যান্ড ক্যানিয়নে বাস করতো। কিন্তু গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন থেকে তারা হারিয়ে গেছে। এদের কোনো বংশধরই আর জীবিত নেই।



নতুন সপ্তাশ্চর্য

নতুন সপ্তাশ্চর্য

সুইজারল্যান্ড ভিত্তিক সংগঠন 'New Seven Wonders Foundation' ২০০৭ সালে ২২০টি দেশের ৪৫০টি স্থানের প্রাথমিক তালিকা প্রণয়ন করে। ইন্টারনেটে ভোটিং-এর মাধ্যমে ২০০৯ সালের ৭ জুলাই শীর্ষ ৭৭টি স্থানের তালিকা প্রকাশ করে। এখান থেকে বাছাই করে ২৮টি চূড়ান্ত প্রতিযোগী স্থানের নাম প্রকাশ করে ২০০৯ সালের ২১ জুলাই। ২৮টি স্থান নিয়ে শুরু হয় চূড়ান্ত ভোটিং কার্যক্রম। প্রথমে অবশ্য ই-মেইলের মাধ্যমে দেয়া গেলেও পরে ফোন এবং এসএমএস-এর মাধ্যমে ভোট দেয়ার সুযোগ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। এ কার্যক্রম চলে ১১.১১.২০১১ পর্যন্ত। এরপর প্রাথমিকভাবে সপ্তাশ্চর্যের তালিকা ঘোষণা করা হয়। সপ্তাশ্চর্য পরিচিতি সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো :

আমাজন (দক্ষিণ আমেরিকা) : প্রশস্ততার দিক দিয়ে পৃথিবীর বৃহত্তম নদী হচ্ছে আমাজন নদী। এটা আমাজন রেইন ফরেস্ট। আমাজোনিয়া, আমাজন জঙ্গল বা আমাজন বেসিন নামে সর্বাধিক পরিচিত। দক্ষিণ আমেরিকার ৯টি (বলিভিয়া, ব্রাজিল, কলম্বিয়া, ইকুয়েডর, ফ্রেন্স গায়ানা, গায়ানা, পেরু, সুরিনাম ও ভেনেজুয়েলা) দেশজুড়ে রয়েছে আমাজন নদী এবং বনের অবস্থান। এটা প্রায় ৫৫ লাখ বর্গ কিলোমিটার জায়গা জুড়ে বিস্তৃত। আমাজন নদীর পানি প্রবাহ পৃথিবীর বৃহৎ ১০টি নদীর পানি প্রবাহের চেয়ে বেশি। পৃথিবীর মোট পানি প্রবাহের প্রায় ১৫ শতাংশ প্রবাহিত হয় এ নদী দিয়ে। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, এত বৃহৎ নদী হওয়া সত্ত্বেও এর উপর কোন ব্রিজ নেই।

হালং বে (ভিয়েতনাম) : ১৯৯৪ সালে ইউনেস্কো কর্তৃক বিশ্ব ঐতিহ্যের অন্তর্ভুক্ত করা হয় ভিয়েতনামের কুয়াংনিহ প্রদেশের উপসাগর হালং বে। এর আয়তন ১৫৫৩ বর্গ কিলোমিটার। এতে প্রায় ২০০০টি ক্ষুদ্র দ্বীপ রয়েছে যার অধিকাংশই পাথরের। এর উপকূল রেখা দৈর্ঘ্যে প্রায় ১২০ কিলোমিটার। হালং বে উপসাগরে প্রায় ২০০ প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়। এর ভেতরে পাথরের তৈরি দ্বীপগুলোর মাঝে রয়েছে অসংখ্য হ্রদ। ডাউ বি (Dau Be) এ রকমই একটি দ্বীপ যার মধ্যে রয়েছে ৬টি হ্রদ।

টেবল মাউন্টেন (দক্ষিণ আফ্রিকা) : টেবল মাউন্ট হচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউনে অবস্থিত একটি পর্বত, যা কেপটাউনের সবচেয়ে আকর্ষণীয় একটি স্তম্ভ। এই স্তম্ভ আকৃতির পর্বতের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এখানে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে উদ্ভিদরাজির সমাহার। প্রায় ১৪৭০ প্রজাতির উদ্ভিদ পাওয়া যায় এই পর্বতে। রক হাইর‌্যাক্স (Rock Hyrax) নামের ইঁদুর সদৃশ (আকারে ইঁদুরের চেয়ে বড়) এক প্রকার জন্তু এ পর্বতের প্রধান প্রাণী যারা পাথরের কোটরে বাস করে। টেবল মাউন্টেনের সর্বোচ্চ চূড়া সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১০৮৬ মিটার উঁচুতে।

ইগুয়াজু ফলস (আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিল) :

পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্তম জলপ্রপাত হচ্ছে ইগুয়াজু ফলস। ফুটবল বিশ্বের দুই পরাশক্তি আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলকে একই সুতায় গেঁথেছে এই ইগুয়াজু ফলস। ৬০-৮০ মিটার উচ্চতা সম্পন্ন জলপ্রপাতটি ব্রাজিল এবং আর্জেন্টিনা সিমান্তে অবস্থিত। ইগুয়াজু ফলস-এর সর্বোচ্চ উঁচু স্থানটির নাম ‘ডেভিল'স থ্রোট'। জলপ্রপাতটির পানি প্রবাহের মূল উৎস হচ্ছে ইগুয়াজু নদী।

জেজু আইল্যান্ড (দক্ষিণ কোরিয়া) :

জেজু দ্বীপ দক্ষিণ কোরিয়ার উপকূল থেকে ১৩০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত। দেখতে অনেকটা আগ্নেয়গিরির মতো হওয়ায় অনেকে একে আগ্নেয়গিরি সদৃশ দ্বীপও বলে। এটা দক্ষিণ কোরিয়ার সর্ববৃহৎ দ্বীপ। জেজু দ্বীরে উপরিভাগের আয়তন প্রায় ১৮৪৬ বর্গ কিলোমিটার। হাল্লাসান পর্বত হচ্ছে এর সর্বোচ্চ বিন্দু যার উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৯৫০ মিটার।

কোমোডো ন্যাশনাল পার্ক (ইন্দোনেশিয়া) :

কোমোডো, রাইকান এবং প্যাডার দ্বীপ নিয়ে গঠিত ইন্দোনেশিয়ার কোমোডো ন্যাশনাল পার্ক। তবে এই তিনটি দ্বীপ ছাড়াও এর সাথে ছোট ছোট আরো অনেকগুলো দ্বীপ রয়েছে। ন্যাশনাল পার্কটির আয়তন ১৮১৭ বর্গ কিলোমিটার। মূলত কোমোডো ড্রাগন (এক প্রকার গুইসাপ)দের রক্ষা করার জন্যই কোমোডো ন্যাশনাল পার্কটি তৈরি করা হয়েছিল। বর্তমানে এটি ৪২ প্রজাতির প্রাণীর অভয়ারণ্য। ১৯৯১ সালে ইউনেস্কো কর্তৃক কোমোডো ন্যাশনাল পার্কটি বিশ্ব ঐহিত্যের (World Heritage site) অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

পুয়েতো প্রিন্সিয়া আন্ডারগ্রাউন্ড রিভার (ফিলিপাইন) :

ফিলিপাইনের পুয়েতো প্রিন্সিয়া শহর থেকে ৫০ কিলোমিটার উত্তরে ‘পুয়ের্তো প্রিন্সিয়া আন্ডারগ্রাউন্ড রিভার' অবস্থিত। ৮.২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এ নদীটি একটি পাথরের পর্বতের নিচে দিয়ে প্রবাহিত হয়ে একটি গুহা অতিক্রম করে দক্ষিণ চীন সাগরে পতিত হয়েছে। এটিই পৃথিবীর দীর্ঘতম আন্ডারগ্রাউন্ড রিভার। নদীটি গুহার মধ্য দিয়ে চলার সময় বিভিন্ন ধরনের ভূমিরূপের সৃষ্টি করেছে। অনেক পর্যটক এখানে ভ্রমণ করে। ১৯৯২ সালে পুয়ের্তো প্রিন্সিয়া আন্ডারগ্রাউন্ড রিভারটি ন্যাশনাল পার্কের আওতায় নিয়ে আসা হয়।

-মহিউদ্দিন নোমান